হেমন্তের আগমনে প্রকৃতির স্নিগ্ধ রূপ

হেমন্তের এমন রূপ কয়েক দিন পড়েই ঢাকা পড়বে শীতের কুয়াশার চাদরেফাইল ছবি

রূপের রানি শরৎ বিদায় নিয়েছে। গুটিগুটি পায়ে চলে এসেছে হেমন্ত। বইছে শীতল হাওয়া, ভোরের সবুজ ঘাসের ডগায় শিশিরবিন্দু চকচক করছে মুক্তোর মতো।

ছয়টি ঋতুর মধ্যে হেমন্ত হলো চতুর্থ ঋতু। কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাসের সমন্বয়ে গঠিত এই ঋতু। হেমন্ত মানেই সারি সারি পাকা ধান। হালকা সোনালি রোদের পরশ লেগে পাকা ধান চকচক করে। এমন অপরূপ শোভা দেখে মন–প্রাণ জুড়িয়ে যায়। মানুষের মনকে বিমোহিত করে সোনালি প্রকৃতির রূপ। খুশির জোয়ার ভাসে কৃষকের ঘরে ঘরে।

কিষান-কিষানির চোখে নতুন স্বপ্ন। আনন্দ আর খুশি বুকে নিয়ে নতুন ধানে গোলা ভরে। নতুন ধান ঘরে তুলে শুরু করে নবান্ন উৎসব। সবার ঘরে তৈরি হয় অনেক রকম পিঠাপুলি, পায়েস, ঢেঁকির শব্দ চারদিকে। হেমন্তকালে বর্ষার পানি শুকিয়ে যাওয়ার পর মাটি যেন ফিরে পায় নব যৌবন। খাল-বিল শুকিয়ে গেলে অনেক ধরনের সুস্বাদু মাছ পাওয়া যায়, যেমন কই, পুঁটি, খয়রা, শিং, বোয়াল, বাইম মাছ। এসব দেশীয় মাছ এই ঋতুতে অনেক বেশি পাওয়া যায়।

হেমন্তে অনেক ধরনের ফুল ফোটে, যেমন গন্ধরাজ, দেবকাঞ্চন, হিমঝুরি, অশোক, মল্লিকা, হাসনাহেনা, শিউলি। এসব ফুলের মিষ্টি সুবাস বাতাসে ভেসে বেড়ায়। অনেক ধরনের টাটকা সবজি পাওয়া যায়, যেমন ফুলকপি, বাঁধাকপি, পালংশাক, মুলা ইত্যাদি।

হেমন্ত ঋতু এলেই এক অপরূপ সৌন্দর্য গ্রামবাংলায় ফুটে ওঠে। সকালে হালকা কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকে মাঠ, পাখিদের কিচিরমিচির কলরব, শিশিরভেজা অজস্র শিউলি ফুল গাছতলায় পড়ে থাকে, কোথাও কোথাও খেজুরগাছের সঙ্গে বাঁধা রসের হাঁড়ি, হালকা রোদের পরশে সবুজ পাতা হেসে ওঠে।

এ সময় আকাশ মেঘমুক্ত থাকে। হালকা নীল রঙে সাজে বিকেলের আকাশ, মাঝেমধ্যে রংধনুর দেখা মেলে। অতিথি পাখিদের আনাগোনা দেখা যায়। সুনসান নীরবতায় হেমন্তের স্নিগ্ধ বিকেলে মন প্রফুল্লতায় ভরে ওঠে। রাতের আকাশে ঝকঝকে জ্যোৎস্নার আলো কিষান-কিষানির মনে জাগিয়ে তোলে নতুন স্বপ্ন ও আশা। এই ঋতু শীতের আগমনী বার্তা নিয়ে আসে।

মানিকদী, ইসিবি চত্বর, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট