রাহাত, ১৪ বছরের কিশোর, তার তিন বন্ধু সোহান, তন্ময় ও রিমাকে নিয়ে শীতের ছুটিতে গ্রামের বাড়ি বেড়াতে আসে। গ্রামের আশপাশের সবুজ বনভূমি, নদীর ধারে দৌড়ঝাঁপ আর পুকুরে সাঁতার—সবকিছুতেই মুগ্ধ তারা। তবে এই ছুটির দিনগুলো এক ভয়ংকর রহস্যে বদলে যাবে, তারা তা কল্পনাও করেনি।
একদিন বিকেলে বনের ভেতরে ঘুরতে গিয়ে বাঁশঝাড়ের নিচে একটি ময়লা কাগজ খুঁজে পায়। কাগজে আঁকা ছিল কিছু অদ্ভুত চিহ্ন—ত্রিভুজ, গোলাকার রেখা, আর কয়েকটি তীরচিহ্ন। সোহান বলল, ‘এটা কি কোনো গুপ্তধনের সংকেত হতে পারে?’
রাহাত হেসে বলল, ‘তুই বেশি বেশি সিনেমা দেখিস।’
কৌতূহল চেপে রাখতে পারল না তারা। কাগজটি নিয়ে বনের আরও গভীরে প্রবেশ করল। পথেই দেখতে পেল পুরোনো এক কুয়ো, যার দেয়ালে একই ধরনের সংকেত খোদাই করা। কুয়োর ভেতরে কিছু ঝকঝক করতে দেখে নিচে নেমে একটি লাল রঙের চাবি খুঁজে পায়।
‘এটা একটা রহস্যময় যাত্রার শুরু হতে পারে’, তন্ময় বলল। তারা চাবি হাতে নিয়ে মানচিত্রের সংকেত অনুসরণ করে বনের গভীরে ঢুকতে থাকে।
বেশ কিছুক্ষণ হাঁটার পর এসে পৌঁছায় এক জায়গায়, যেখানে বড় বড় পাথরের স্তম্ভ দিয়ে ঘেরা একটি পাথরের দরজা ছিল। দরজার ওপরেও সেই একই চিহ্ন আঁকা। রিমা বলল, ‘চাবিটা এখানে কাজে লাগতে পারে।’
চাবি ঘোরাতেই দরজাটি কেঁপে উঠল এবং ধীরে ধীরে খুলে গেল। দরজার ওপারে একটি অন্ধকার গুহা।
গুহায় ঢুকে চার বন্ধু দেখে চারপাশে ঝলমলে সোনালি আলো। গুহার দেয়ালে পৌরাণিক বিভিন্ন চিত্র খোদাই—দেবতা, দৈত্য আর যোদ্ধাদের ছবি। গুহার কেন্দ্রে একটি পাথরের মঞ্চ। সেই মঞ্চের উপর রাখা তিনটি রহস্যময় রত্ন—একটি নীল, একটি লাল, আর একটি সবুজ। প্রতিটি রত্ন নিজ থেকে আলো ছড়াচ্ছিল। মঞ্চের চারপাশে পাথরের থামের উপর লেখা একটি সতর্কবাণী ‘যদি সঠিক নিয়ম জানা না থাকে, তবে রত্ন ছোঁয়ার আগে দ্বিতীয়বার ভাবো।’
রিমা বলল, ‘আমাদের আগে ভাবতে হবে। কারণ, ভুল করলে বিপদ আসতে পারে।’
ঠিক তখনই মঞ্চের মেঝেতে ভেসে উঠল ধাঁধার মতো কিছু শব্দ— ‘নীল হলো জ্ঞানের প্রতীক, লাল হলো সাহসের, সবুজ হলো ঐক্যের। যে রত্নটি সবার চেয়ে বেশি মূল্যবান, সেটি আগে ধরো।’
তন্ময় চিন্তিত মুখে বলল, ‘তাহলে কোনটা সবচেয়ে মূল্যবান?’
রিমা বলল, ‘এটা পরিষ্কার—জ্ঞান ছাড়া সাহস বা ঐক্য টিকে থাকতে পারে না। নীল রত্নটাই সবার চেয়ে মূল্যবান।’
রাহাত ধীরে ধীরে হাত বাড়িয়ে নীল রত্নটি ধরল। সঙ্গে সঙ্গেই চারপাশের মেঝে শান্ত হয়ে গেল এবং গুহার এককোণে একটি গোপন দরজা খুলে গেল। দরজার ওপাশে তারা দেখতে পেল একটি সিন্দুক, যার ভেতরে ছিল প্রাচীন পুঁথি, সোনার মুদ্রা ও বিভিন্ন ঐতিহাসিক নিদর্শন। পুঁথিতে লেখা রত্নগুলোর ঐতিহাসিক ও পৌরাণিক কাহিনি। রাহাত বলল, ‘এগুলো আমাদের গ্রামের ইতিহাসের অমূল্য সম্পদ। এগুলোকে সঠিক জায়গায় সংরক্ষণ করব।’
রত্ন আর নিদর্শন নিয়ে তারা গুহা থেকে বেরিয়ে এল।
শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়