হাঁড়ি আর নাড়ির খবর

বৈশাখী আলপনাছবি: শহীদুল ইসলাম

বিষয়টি নিয়ে ভাবছে সবাই। গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি। এর একটা সুরাহা না করে নিশ্চিন্তে ঘরে ফিরবে না গোটা সচেতন পশুসমাজ, মশাই, খবরটা কিন্তু সিরিয়াস। খবরটা এসেছে ঢাকা থেকে। এ খবর তো আর ফাঁকা হতে পারে না। বিজ্ঞের মতো মাথা ঝাঁকিয়ে বলল জনাব বয়োজ্যেষ্ঠ বাঘ। এর পেছন থেকে গলা উঁচিয়ে জেব্রা বলল, তা তো বুঝলাম, কিন্তু খবরখানি কী?

এবার সবাই নড়েচড়ে উঠল। তাই তো খবরখানিই জানা হলো না, অথচ তদন্ত কমিটি, পশুবন্ধন, অনশন ও ধর্মঘটের শিডিউল হয়ে গেল। মানুষকে দেখে দেখে এই পশুসমাজও দিন দিন বুদ্ধিহীন হয়ে পড়ছে। অন্ততপক্ষে একটা প্রেস রিলিজ তো হাতে পাওয়া দরকার।

হই হই রই রই...খবরখানি গেল কই...? ....আকাশ-বাতাস যখন অনুরণিত হতে লাগল, ঠিক তখনই ঈশানকোণে গর্জে উঠল মেঘরাজি। তারপর গোটা আকাশ ভেঙে পড়ল সবার মাথার ওপর।

থাক ভাই থাক। কাকভেজা হওয়ার আগে ঘরে ফেরা যাক। ফেসবুকে খবর পাওয়া যাবে, এ আশায় সবাই ফিরল ঘরে। ঘরে ফিরে সবার হায় হায়! ইলেকট্রিসিটি তো নেই। তাহলে এবার চলো ঘুমের দেশেই যাই। এই বলে সবাই ঘুমরাজ্যে চলে গেল। এদিকে ই-মেইল চেক করতে না পারায় দুশ্চিন্তায় দুচোখের পাতা এক করতে পারছিল না চিতা সাহেব। অগত্যা বারান্দায় পায়চারি করতে লাগল। ঘুম না এলেও আজকাল ধূমপান করে না সে আগের মতো। তার বদলে প্রাকৃতিক বাতাস নেয় প্রাণভরে। মশা-মাছি বেড়ে যাওয়ায় বাতাসের ফাঁকে ইদানীং দু-একটা খুব যন্ত্রণা দিচ্ছে চিতা সাহেবকে। হঠাৎ দেখে সামনের বাড়িতে আলো জ্বলছে। শিয়াল মিয়াটা যা হচ্ছে দিন দিন, ছোট্ট শিশুটাকে পড়াশোনার জন্য একটু বেশিই চাপ দিচ্ছে। সবাইকে কি শিয়াল পণ্ডিত হতে হবে নাকি? এত রাতেও বাচ্চাটা ঘুমাতে যায়নি। আহা রে, কবে...সমবেদনার প্রশ্বাস আর পড়তে পারল না। দরজায় ঠক ঠক শব্দ। দরজা খুলে দেখে স্বয়ং ঘুমরাজ্যের প্রহরী প্যাঁচাকুল দাঁড়িয়ে।

পয়লা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রা
ফাইল ছবি

তলব পড়েছে সবার। এবারই খোলাসা হবে হাঁড়ির আর নাড়ির খবর। চোখমুখ কচলে একে একে সবাই এসে জড়ো হয়েছে। ভিড়ের সামনে থেকে সিংহ আর বাঘ একরকম ঠেলাঠেলিই করছিল। ভাই, আপনি বলুন...আরে না না। তা হয় নাকি, আপনিই বলুন না আজ এই ঠেলাঠেলির অবসান চিৎকারে। বয়স আর মুরব্বিয়ানার ঠেলাঠেলির মধ্যে ছোট্ট এক শিক্ষিত হাতির ছানা তোয়াক্কা না করেই শুঁড় উঁচিয়ে বলে উঠল—সম্মানিত পশুকুল, আপনাদের স্বাগত। ঘুম থেকে ডেকে আনার জন্য আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।

গতকাল বনের আকাশ-বাতাসে যে খবর আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল, তা আসলে কোনো আসল খবর নয়, আবার খবরটা মিথ্যাও নয়। ঢাকা থেকে আমাদের প্রতিবেদক কাকপক্ষী জানিয়েছিল, ঢাকা শহরে বনের পশুপাখিদের বনছাড়া করার ষড়যন্ত্র চলছে। সে নিজ কানে শুনেছে, এক বিশাল গণশোভাযাত্রার প্রস্তুতি চলছে। যেখানে বন থেকে বাঘ, হাতি, হরিণ, ঘোড়া, প্যাঁচা ও কুমির ধরে নিয়ে আসা হবে। এমনকি বাদ যাবে না ফুল-প্রজাপতিরাও। এ খবর শুনে আমরা এতটাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ি যে আতঙ্কে খবরখানিই কেউ মুখ ফুটে বলতে পারিনি। এদিকে বনে ঝড়বৃষ্টি থাকায় বিদ্যুৎ ছিল না। ইন্টারনেটও কাজ করেনি, তাই ফেসবুকেও জানানো সম্ভব হয়নি। যা-ই হোক আশার বাণী হলো, এই যে সরেজমিনে প্রদর্শন করে আমাদের বিশেষ প্রতিবেদক বানর জানিয়েছে, মানুষেরা বর্ষবরণের মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর আমাদের সেরা মঙ্গলের প্রতীক হিসেবে উপস্থাপন করতে চায় বলেই আমাদের প্রতিকৃতি তৈরি করছে। হা হা হা...আর যে যা-ই বলুক ভাই, আমরাই তো এ ভূখণ্ডের আসল-নির্ভেজাল ধারক ও বাহক। যুগে যুগে আমরাই তো বয়ে বেড়াচ্ছি বাঙালি ঐতিহ্য। এ আর নতুন কী? সবাই এবার স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল। কিন্তু একটা প্রশ্ন সবার মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগল—এক দিনের বাঙালি হতে মানুষের এত প্রচেষ্টা? হা হা হা!