‘প্রদোষে প্রাকৃতজন’ উপন্যাসে ইতিহাসের বাঁকবদলের গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়ের সাধারণ মানুষের কথা তুলে ধরেছেন লেখক শওকত আলী তাঁর অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টিতে।
ইতিহাসে আমরা শুধু রাজা-বাদশাহদের কাহিনি পড়ি। সাধারণ মানুষের কথা সেখানে নগণ্য বা অনেক ক্ষেত্রে নেই বললেই চলে। এই না থাকা অংশটুকু ‘প্রদোষে প্রাকৃতজন’ উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু। সেন রাজার শাসনামলে রাজার অনুচর ও সামন্তদের অত্যাচারের কোনো অবধি ছিল না। শাসিত মানুষদের একজন যেন নিজেকেই প্রশ্ন করে, ‘দেখো, এই কি মানুষের জীবন? সুখ নেই, শান্তি নেই, গৃহ নেই, কেবলি প্রাণ নিয়ে পলায়ন করতে হচ্ছে। এর শেষ কোথায়? এ জীবন কি যাপন করা যায়? বলো, কত দিন এভাবে চলবে?’
রাজার শাসন ক্রমেই শিথিল হয়ে পড়লে বাংলা আক্রমণ করেন তুর্কি সেনাপতি ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজি। বাংলায় শুরু হয় মুসলিম শাসন।
ইতিহাসের সেই ক্রান্তিলগ্নের আবহে আবর্তিত কয়েকজন প্রাকৃত নর–নারীর কাহিনি উপন্যাসে বিবৃত হয়েছে। ইতিহাসে তাদের নাম নেই। তবে মানবসভ্যতার আদিকাল থেকে তারা বিভিন্ন নামে বিভিন্ন রূপে বিরাজ করে এসেছে। হয়তো অন্য কোনো নামে বা অন্য কোনো কালে। ‘প্রদোষে প্রাকৃতজন’ ও ‘দুষ্কালের দিবানিশি’ এই দুই খণ্ডে বিভক্ত এই উপন্যাসে লেখক দেখিয়েছেন ইতিহাসের সেই দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকার সংগ্রাম। মৃৎশিল্পী শ্যামাঙ্গ, স্বামী পরিত্যক্তা লীলাবতী, বণিক বসন্ত দাস বা বৌদ্ধ ভিক্ষু মিত্রানন্দের কর্মকাণ্ডের মধ্যে মানুষের স্বপরিচয়ে উঠে দাঁড়ানোর একটা প্রয়াস লক্ষ করা যায়। নতজানু দাসত্ব থেকে মুক্ত হয়ে স্বপ্ন আর ভালোবাসার একটা জীবন উপহার দিতে চায় উত্তরসূরিদের।
শওকত আলীর উপন্যাস ‘প্রদোষে প্রাকৃতজন’ একটি যত্নলব্ধ ফল। ইতিমধ্যে উপন্যাসটি চিরায়ত সাহিত্যের মর্যাদা লাভ করেছে। গবেষণা, তথ্য, অন্তর্দৃষ্টি এবং অনুপম ভাষা—সবকিছু মিলিয়ে ‘প্রদোষে প্রাকৃতজন’ বাংলা সাহিত্যের উপন্যাসের ধারায় একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন।
একনজরে
বই: প্রদোষে প্রাকৃতজন
রচয়িতা: শওকত আলী
প্রকাশক: ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড
প্রচ্ছদ: সমর মজুমদার
পৃষ্ঠাসংখ্যা: ১৯৭
মুদ্রিত মূল্য: ২৬০ টাকা।