ভিন্ন এক তিস্তাপারের বৃত্তান্ত ‘সাঁতাও’

‘সাঁতাও’ সিনেমার একটি দৃশ্যছবি : সংগৃহীত

ভিন্ন এক তিস্তাপারের বৃত্তান্ত ‘সাঁতাও’। রংপুরের আঞ্চলিক ভাষায় নির্মিত ভিন্ন ধারার একটি চলচ্চিত্র এটি। প্রান্তিক নিম্নবর্গের রাজবংশী মানুষের জীবনযাপন ও সংগ্রামের চলমান ছবি। পরিচালক খন্দকার সুমন।

কিছুদিন আগে বাংলাদেশে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘মেড ইন চিটাগং’ মুক্তি পেয়েছে। আঞ্চলিক ভাষাগুলো আমাদের বাংলা ভাষার সম্পদ। একেকটা শাখানদী। এসব শাখানদী মূল ভাষার স্রোতকে সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী করে। এসব ভাষার সঙ্গে যুক্ত হয়ে আছে আঞ্চলিক ভাষাগোষ্ঠীর মানুষের লড়াই, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সংস্কার, নির্মাণ-বিনির্মাণের কত শত লোককথা, লোকগান, মাটি, মানুষ ও প্রকৃতির শ্বাস-প্রশ্বাস।

রুক্ষ মাটিতে খরা–ফাটায় বিষাদদীর্ণ হয় শুকনো জীবন। চোখের সব জল শুকিয়ে উবে গিয়ে কঠিন বাস্তবতায় হঠাৎ বৃষ্টি নামলে, ঘাসে ঘাসে বুনো ফুলে আবার জীবনের নতুন ছন্দ, নতুন স্রোত, নতুন করে বেঁচে থাকার আশ্বাস মেলে। প্রান্তিক মানুষের জীবনে সেভাবে সাঁতাও আসে।

‘সাঁতাও’ শব্দের অর্থ সাত দিন ধরে হয়ে চলা কিছু। এই ছবিতে সাত দিন ধরে বৃষ্টি না হলেও একটানা বৃষ্টি হয়। প্রাণের উল্লাসে পিঁপড়ার মতো মানুষের ঢল নামে জলে, মাছ ধরবে বলে। ট্রেলারে শৈল্পিক দৃশ্যবুনন, সিনেমাটোগ্রাফি ভীষণ ভালো লেগেছে! এ যেন বৃষ্টির সঙ্গে নদীর জলের, জলের সঙ্গে মাছের, মাছের সঙ্গে মানুষের চক্রাকার এক প্রাণবন্ত জীবনের খেলা।

‘সাঁতাও’ ছবিতে গ্রামীণ মানুষের উৎসব পিঠা খাওয়ার একটা গান এসেছে। সেই গানে চিত্রায়িত হয়েছে গাছির সুনিপুণ হাতে খেজুর গাছ কাটার শৈল্পিক দৃশ্য, গ্রামবাংলার আবহমান ঢেঁকি, ঢেঁকিতে চাল গুঁড়া করা, ভাপের পিঠা বানানো, রসে টইটম্বুর পিঠা বিতরণসহ আনন্দে মাতোয়ারা কিছু মুহূর্ত, জীবনের স্বাদ।

আবার পোয়াতি গাভির সঙ্গে পোয়াতি মানুষের মা হতে চলার জীবন, মা হতে চলার যন্ত্রণা, জীবনের স্বাদ ভক্ষণ অন্য মাত্রা এনে দেয়। কান্নার দৃশ্যে বুক কচলে ওঠে। নাচ-গানের দৃশ্য আর প্রাণের সঙ্গে প্রাণের অনুভূতির সঙ্গম, দৃশ্য থেকে দৃশ্যান্তরে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে। জীবনটা ফুলশয্যা না হতে পারে, একেবারে বৃথা কণ্টকশয্যাও হয়তো নয়।
প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শত শত মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ বাস্তবের সঙ্গে সিনেমাকে মিলিয়ে দেয়। পরিচালক খন্দকার সুমন এই প্রান্তিক গোষ্ঠীর মানুষের সঙ্গে মিশেই বড় হয়েছেন। যে জীবন তিনি ভিড়ে মিশে গিয়ে যাপন করেছেন, সেই কষ্টযাপনের, আনন্দযাপনের, বিষাদ–কান্নাযাপনের এক উদযাপন যেন এই চলচ্চিত্র।