বাঙালির ঐতিহ্য মৃৎশিল্প

রোদে শুকানো পাত্র গুছিয়ে নিয়ে এবার আগুনে পোড়ানো হবে। বিজয়পুর রুদ্র পাল মৃৎশিল্প সমবায় সমিতি কারখানা, কুমিল্লাছবি: এমদাদুল হক

বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী শিল্পগুলোর অন্যতম হচ্ছে মৃৎশিল্প। এটি আবহমান গ্রামবাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য। প্রতিটি দেশের রয়েছে নিজস্ব শিল্প ও সংস্কৃতি। আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে মৃৎশিল্পের সম্পর্ক অনেক গভীর। ‘মৃৎ’ শব্দের অর্থ মৃত্তিকা বা মাটি আর ‘শিল্প’ বলতে এখানে সুন্দর ও সৃষ্টিশীল বস্তুকে বোঝানো হয়েছে। এ জন্য মাটি দিয়ে তৈরি সব শিল্পকর্মকেই মৃৎশিল্প বলা হয়। এসব কাজ যারা করে তাদের বলা হয় কুমার।

এ শিল্পের প্রধান উপকরণ এঁটেল মাটি, জ্বালানি কাঠ, শুকনা ঘাস, খড় ও বালি। মাটির তৈরি কলসি, ফুলের টব, বাসন, সাজের হাঁড়ি, মাটির ব্যাংক, বিভিন্ন ধরনের ডাইনিং আইটেম, বিভিন্ন গার্ডেন আইটেম, ফুলদানি, মাটির টবসহ হরেক রকম তৈজসপত্র বানানো হয়। শিশুদের বিভিন্ন খেলনাসমগ্রীও তৈরি করা হয় মাটি দিয়ে। অতীতে গ্রামীণ পরিবেশে কারিগরের হাতে তৈরি মাটির জিনিসের কদর ছিল সবচেয়ে বেশি। পরিবেশবান্ধব এ শিল্পের তৈজসপত্র শোভা পেত গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে।

গ্রামবাংলার চিরচেনা এই মৃৎশিল্প এখন বিলুপ্তির পথে। আজকাল কুমারপাড়ার মানুষের ব্যস্ততা অনেক কমে গেছে। মৃৎশিল্প কালের বিবর্তনে কমে যাচ্ছে। অনেকেই এ পেশা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে বেছে নিচ্ছেন ভিন্ন পেশা।

পূর্বপুরুষের রেখে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী এই পেশা টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কুমারদের। হাঁটবাজারে আর মাটির তৈজসপত্রের পসরা বসে না। আগের মতো বিক্রি না হলেও একেবারে যে বিক্রি নেই, এ কথাও বলা যাবে না। কুমারেরা মানুষের প্রয়োজনীয়তা ও চাহিদার কথা মাথায় রেখে তৈরি করছেন নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্য। এই পণ্যসামগ্রী কেউ কেউ ঘর সাজানোর কাজে ব্যবহার করছেন। প্রযুক্তির উন্নয়নের কারণে ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পের ব্যবহার কমে গেছে। আর এ শিল্পের জায়গা দখল করে নিয়েছে প্লাস্টিকসহ অন্যান্য সামগ্রী। প্রতিনিয়ত প্লাস্টিক, স্টিল, চিনামাটি, সিলভারসহ বিভিন্ন ধরনের ধাতব পদার্থ দিয়ে তৈরি হচ্ছে শৌখিন জিনিসপত্র। এ কারণে ধ্বংসের মুখে এই প্রাচীন মৃৎশিল্প।

ঐতিহ্যবাহী এ শিল্প টিকিয়ে রাখতে এখনই উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এ শিল্প বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। সেই সঙ্গে বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানকেও এগিয়ে আসতে হবে। মৃৎশিল্পের সঙ্গে জড়িত কুমার ও শ্রমিকদের সহজ শর্তে ঋণ ও সুযোগ–সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে বিভিন্নমুখী উৎপাদনে আগ্রহ বাড়াতে হবে। সর্বোপরি দেশীয় এই শিল্পের সমৃদ্ধির লক্ষ্যে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

বন্ধু, বন্ধুসভা চট্টগ্রাম