বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একগুচ্ছ কবিতা

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (১৭ মার্চ ১৯২০—১৫ আগস্ট ১৯৭৫ )প্রতিকৃতি: মাসুক হেলাল

ইতিহাসের পাতায় বত্রিশ নম্বর
নিপুন দাস

সেই সিঁড়িতে পড়ে থাকা লাশ
হাতে ধরা পাইপ, কালো চশমা
সাদা পাঞ্জাবি, চেক লুঙ্গি
বত্রিশের সে বাড়ি আড়াআড়ি।
শ্রাবণের ভোররাতে প্রলয় তমসার সুনামি
গিলে নিয়েছিল বাঙালির সব স্বপ্ন সুষমা
ইতিহাসে জমে আছে কালো পিশাচের নৃত্য,
বত্রিশের সিঁড়িতে রক্তমাখা বুটের প্রতিধ্বনি
অনাথ চশমাটি পড়ে ছিল একপাশে
তখনো প্রিয় পাইপে ছিল বজ্রমুখী শান্ত প্রলাপ।
ওই যে নক্ষত্র জ্বলে আছে ভোররাতে
দুঃস্বপ্ন থেকে মরচে ঝরে পড়ছে
অন্ধকার ফিকে হয়ে আসে দশকে দশকে
ঘোর অন্ধকারে তবুও জাগেনি পথরেখা,
তাই তো ঘোর অমাবস্যায়
পৃথিবী জাগায় তারার জ্যোতি।

ধ্রুবতারা
মঈন তাজ

এই ক্ষত শুকাবে না কোনো দিন
ফুরাবে না এই ঋণ আর,
তোমার রক্তে ভেজা মাটি বাংলার।
তুমি চির অম্লান
অক্ষত অব্যয় বাংলার সন্তান,
এই দেশ, স্বাধীনতা, তোমারই অবদান।

ধ্রুবতারা তুমি জ্বলজ্বলে উজ্জ্বল
স্বপ্ন তোমার হয়নি তা নিষ্ফল
ওহে দিক দিশারি, স্বপ্নচারী
তোমার স্বপ্নে আলোকিত আজ বাংলার বিভাবরী।
এই বাংলার প্রতি ধূলিকণা জানে  
মিশে আছ তুমি বাংলার প্রতি প্রাণে
অনন্তকাল বেঁচে রবে তুমি গল্প কবিতা গানে।
হে বিপ্লবী বীর,
বীরত্ব তোমার চির জাগ্রত দাসত্ব মুক্তির।
ভেঙে অধীনতা
নিলে স্বাধীনতা
মুক্তির জয়গানে,
আমৃত্যু তুমি নিবেদিতপ্রাণ
মানুষের কল্যাণে।
চায়নিকো যারা এই বাংলার অরুণ সুপ্রভাত
বর্বরতার হিংস্র থাবায় এনেছিল কালরাত
নিপাত হয়েছে তারা,
তুমি রয়েছ হৃদয়ে হৃদয়ে
হয়ে আছ ধ্রুবতারা।

বিশ্ববন্ধু শেখ মুজিব
রাজীব চৌধুরী

একটি পতাকার জন্ম দিয়ে নিজেই হয়েছ পতাকা
কিন্তু তোমার বুকের ওপর, বিশ্বের মানচিত্র আঁকা।
বিশ্ববন্ধু শেখ মুজিব, তুমি মহান দার্শনিক
মানবমুক্তির পথে, সূর্যস্পর্শী চরণ চিহ্ন রাখা।
বিশ্বজুড়ে অসংখ্য মানুষ এখনো শৃঙ্খলিত
ক্ষুধা-মহামারি-যুদ্ধ-নিপীড়ন-যন্ত্রণা
কাঁটাতারে তরবারির মতো বুক চিরে রাখা
এই দুর্ভাগা পৃথিবী যদি, আরেকটিবার তোমাকে পেত।
নিরুপায় মানুষ, অসহায় মানুষ হয়তো কিছুটা
খুঁজে পেত উপায়, সহায়
তোমার জীবনের গতিরেখা, উদ্দাম ঢেউয়ের আঁকাবাঁকা
আগামীর পথে পথে ছড়িয়ে যায়।
তোমার জন্য বিশ্বজুড়ে, সহস্র কোটি বাঙালির মানবতার নাম হয়েছে কবিতা
সব নদী এসে যেমন একদিন মহাসমুদ্রে মেশে
অন্তরে বাংলার মাঠ-ঘাস-ফুল, পাখির কিচির মিচির, কিষান-কিষানির লৌকিক প্রণয়গাথা।

পনেরোই আগস্ট
সোলায়মান জয়

কণ্ঠের তীব্রতায় জ্বলেছিল আকাশ
খুনের তেজ দেখেছিল শকুনিয়া রাত
অঙ্কুর হয়েছিল নির্বাপিত লাশের স্বপ্ন
বিস্ময়কর সে কণ্ঠটির নাম-বঙ্গবন্ধু।
রক্তের চিৎকারে স্বপ্নের ঘুম ভাঙিয়ে
বটগাছের মতো বিস্তার করেছিল রক্তপথ।
প্রসবযন্ত্রণায় নয়, তেজের গর্জিত অগ্নিতে
খুনপ্রবাহ সফেন বারিনিধি পাড়ি দিয়ে
সূর্যের মতো রক্তে এঁকেছিল সবুজের বুকে
বাংলাদেশ নামের একটি পৃথিবী।

নিশ্বাস নেই, তবু বেঁচে আছে বাংলাদেশের মতো
শিশুর মতো পরম যত্নে বেড়ে উঠা বজ্র, বঙ্গবন্ধু
সাত কোটি তারা জ্বালানোর নাম বঙ্গবন্ধু
পনেরোই আগস্ট! শোকের নাম বঙ্গবন্ধু।

আগস্টের সেই রাত
নন্দিনী আরজু রুবী

তমসাচ্ছন্ন কালরাত্রির কলঙ্কিত ইতিহাস,
তাজা রক্তের অসংখ্য দাগে ভ্রান্তির সর্বনাশ।
মর্মন্তুদ মৃত্যু হেনেছে বিষণ্ণ ঘেরা আঁধার।
এনেছে শোকের বহ্নি-ক্ষত বিদীর্ণ অন্তর...
মানচিত্রে কলঙ্কের কালি, ঘৃণ্য অপরাধ।
তেজোদীপ্ত বিমল আলো নখের আঁচড়ে ম্লান হলো...
ফ্রেমবন্দী স্বপ্ন চোখে নিথর কালের ভ্রম।
নির্ভীক সেই ভীষণ কণ্ঠ, স্তব্ধ হবে না কখনো,
অযুত-কোটি কণ্ঠে মিশে দিগদিগন্ত উঠবে কেঁপে!
হবে না কভু লীন...
মুক্তি দিশারি আঙুলের তেজে গণজোয়ার
উঠেছিল জ্বলে! আজন্ম রাখবে মনে পিতার অবদান।
যাবতীয় সব রুদ্ধদ্বারে রক্তঋণ আগল খোলে,
শিরায় শিরায় শোণিত প্রবাহে, আছ তুমি অবিনাশী প্রাণে।
স্বদেশের বুকে স্মরণে বরণে, আজও অক্ষয়
মানুষের মনে, মুজিব তোমার নাম।