অনেকের জীবনেই এমন কিছু বন্ধু বা আপনজন আছে, যাদের সঙ্গে দূরত্ব বেড়ে গেছে। কারও কারও সঙ্গে দীর্ঘদিন যোগাযোগ নেই। অথচ তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে চাইলেই মুহূর্তের মধ্যে যোগাযোগ করা সম্ভব। সেটাও করা হচ্ছে না। ভেতরে একধরনের অস্বস্তি কাজ করে। যোগাযোগ করলে সেই মানুষটি কীভাবে তা নেবে কিংবা আদৌ সে আমাকে বন্ধু মনে করে কি না—এমন চিন্তা কাজ করে। শেষ পর্যন্ত আর যোগাযোগ করা হয়ে ওঠে না, তবে দূরত্ব ঘুচুক, সেটা মনে মনে চায়।
যুক্তরাষ্ট্রের জার্নাল অব পার্সোনালিটি অ্যান্ড সোশ্যাল সাইকোলজিতে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, মানুষ প্রায়ই এটা বুঝতে পারে না যে দূরত্ব বেড়ে যাওয়া বন্ধু বা আপনজনেরা তাদের কাছ থেকে কোনো সাড়া পেলে কতটা খুশি হয়। গবেষণাটির প্রধান লেখক পেগি লিউ বলেন, ‘যদি এমন কেউ থাকে, যার সঙ্গে যোগাযোগ করতে আপনি অস্বস্তি বোধ করছেন; এমন কেউ, যার সঙ্গে এখন আর কথা হয় না, আপনার উচিত তার সঙ্গে যোগাযোগ করা। দেখবেন, আপনি যেমনটা ভাবছেন, এর চেয়েও বেশি খুশি সে হবে।’
প্রায় ছয় হাজার মানুষের ওপর এ গবেষণা পরিচালনা করা হয়। দেখা যায়, দূরত্ব বেড়ে যাওয়া মানুষটির সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা যে খুশি হয়, তা আমরা প্রায়ই বুঝতে ভুল করি। আরও উঠে আসে, কোন মাধ্যমে যোগাযোগ করলে বেশি খুশি হয়। অধিকাংশই খুশি হয় ফোনকল, টেক্সট, ই–মেইল, চিরকুট অথবা কোনো উপহার পেলে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, যোগাযোগ যদি সারপ্রাইজিং হয়, মানুষ তখন বেশি মূল্যায়ন করে। বিশেষ করে এমন কেউ, যার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হয় না কিংবা যাকে কাছের কেউ বলে ভাবা হয় না। পেগি লিউ বলেন, ‘যখন আপনি হঠাৎ যোগাযোগ করার এই ভালো দিকটা অনুভব করবেন, তা আপনার উপলব্ধিকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।’
বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখতে যত্ন লাগে বলে মনে করেন সমাজবিজ্ঞানী আনা আকবরী। তিনি বলেন, বেশ কয়েকটি ইস্যু পুরোনো বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে আমাদের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। একটি হলো, এটা মনে করা যে ‘সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে আমি বেশি এফোর্ট দিচ্ছি, সে তো দিচ্ছে না।’ অথবা ধারণা করা যে ‘বন্ধুটি হয়তো আমাকে আর পছন্দ করে না।’ আরও একটি কারণ হলো, প্রত্যাখ্যানের ভয়। আনা আকবরী বলেন, ‘প্রত্যাখ্যানের আশঙ্কা বাদ দেওয়া যাবে না। তাই কীভাবে একে মানিয়ে নেওয়া যায়, তা শিখতে হবে।’
ফোনকল দেওয়াটা সবচেয়ে ভালো উপায় হতে পারে। প্রথমে কিছুটা অস্বস্তি অনুভব হলেও এটাই সম্পর্ককে স্বাভাবিক করতে বড় ভূমিকা রাখে।
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, পুরোনো বন্ধুর সঙ্গে ফোনকল বা টেক্সট মেসেজে কথা না হলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পোস্টে কমেন্ট বা রিঅ্যাক্ট দেওয়ার মাধ্যমে একধরনের যোগাযোগ রয়েছে। তবে এটা সম্পর্ক বাড়াতে খুব একটা ভূমিকা রাখে না। মনোবিজ্ঞানী মারিসা ফ্রাঙ্কো বলেন, ‘যারা পুরোনো বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগে ফোনকল বা টেক্সট মেসেজ দিতে অস্বস্তি অনুভব করে, তাদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পোস্টে কমেন্ট করাটা একটা ভালো মাধ্যম হতে পারে।’
তবে আনা আকবরী মনে করেন, এর মাধ্যমে সম্পর্ক আরও খারাপ হতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পোস্টগুলোতে কমেন্ট করাকে ব্যক্তিগত যোগাযোগ ও সংযোগ বলে ভুল করি।’ আকবরীর পরামর্শ হলো, ফোনকল দেওয়াটা সবচেয়ে ভালো উপায় হতে পারে। প্রথমে কিছুটা অস্বস্তি অনুভব হলেও এটাই সম্পর্ককে স্বাভাবিক করতে বড় ভূমিকা রাখে। তিনি আরও বলেন, ‘যদি আমরা কারও সঙ্গে ফোনকল বা সামনাসামনি কথা বলি, আমাদের মধ্যে কথার বিনিময় হয়। আমি কিছু বললে, আপনি পাল্টা কিছু বলতে পারবেন। দেরি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’
ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন তাহসিন আহমেদ