দ্য নিউ আলকেমি ছাত্রাবাস

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

—আলামিন ভাই...এই আলামিন ভাই। একটু দেখেন না, কী জানি একটা আসতেছে আমার দিকে।
আলামিন ভাই বেঘোরে ঘুমাচ্ছেন। এই মাঝরাতে আলামিন ভাইয়ের কাঁচা ঘুম ভাঙানো অসম্ভব। জিহান খাটের কোনায় জিম ধরে বসে রইল। জিনিসটা এখন আর নড়ছে না। তার মুখোমুখি বসে আছে। যেন কিছু একটা বলতে চায়।
এ ঘটনা পাঁচ দিন আগের। আমার বন্ধু জিহান ইদানীং মাঝরাতে ভূতের দেখা পাচ্ছে। তার ধারণা, ভূতটা কোনো ক্ষতি করতে চায় না। শুধু ভয় দেখাচ্ছে।

যেমন আজ সকালে সে দাঁত ব্রাশ করে গামছা দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে আমার রুমে এসে খাটের ওপর বসল। মুখ শুকনা, আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। জিজ্ঞেস করলাম
—কী? আজকেও দেখেছ নাকি?
—হুম। বিশ্বাস না হলে আলামিন ভাইকে জিজ্ঞেস করতে পারো।
—তার দরকার নেই। কী দেখেছ আজকে?
—ছোট্ট একটা বাচ্চা হামাগুড়ি দিচ্ছে।
—বাচ্ছা ভূত? ভূতের বাচ্চা হামাগুড়ি দিয়ে তোমার রুমে গেল কীভাবে?
—জানালা তো খোলা ছিল।
—কী যে বল। এত ছোট ছিদ্র দিয়ে! একটা বাচ্চা তোমার রুমে ঢুকেছে তোমাকে ভয় দেখানোর জন্য। তা–ও আবার হামাগুড়ি দিয়ে। এটা কি বিশ্বাস করার মতো?
—আলামিন ভাইকে জিজ্ঞেস করো তাহলে।
—আচ্ছা বাদ দাও। তুমি না ওই দিন বললে তোমার ছোট ভাগনে হয়েছে। তুমি তাকে দেখতে যেতে পারছ না ভার্সিটি বন্ধ না দেওয়ার জন্য। তুমি আসলে তাকেই দেখেছ। তোমার সাবকনশাস মাইন্ড তোমাকে এটা দেখিয়েছে।
দুই দিন পরের ঘটনা। রায়হান আমার রুমে এসে উপস্থিত। গভীর রাত। একচোট ঘুমিয়ে এসেছে বোঝা যাচ্ছে। আমি তখনো জেগেই আছি।
—শিহাব ভাই! ভয়ংকর একটা ব্যাপার ঘটেছে।
—ব্যাপার কী খোলাসা করে বল।
—আমি ঘুমাচ্ছিলাম। হঠাৎ টের পাই কেউ একজন আমার গাল চেটে দিচ্ছে। আমার মাথায় শরীর ঘষছে। উঠে দেখি কিছু নেই। এই দেখেন গালে এখনো লালা লেগে আছে।
আমি গভীর উদ্বেগ নিয়ে দেখলাম, সত্যিই তো! আঠালো শ্লেষজাতীয় পদার্থ ওর গালে লেগে আছে।

আরেক দিন ভার্সিটি থেকে মাত্র ফিরেছি। ফ্যান ফুল স্পিডে ছেড়ে দিয়ে বসলাম শরীরটা ঠান্ডা করব বলে। আমার রুমমেট আরিফুলকে দেখি সে বেশ বিরক্ত। পায়চারি করছে আর নিজেই নিজেকে বলছে, ‘মাত্র বাজারটা নিয়ে রাখলাম, এর মধ্যেই মাছটা গায়েব হয়ে গেল?’ সে কাকে যেন গাল দিতে দিতে সাবানের কেস ও গামছা নিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেল।
জিহান এসে বলল, ‘ঘটনা শুনছ মিয়া? আজকে তো মাছ গায়েব হয়ে গেছে। কয়েক দিন পর না জানি আমরাই গায়েব হয়ে যাই।’ আমি কিছু না বলে চুপ করে রইলাম। কী বলব ভেবে পেলাম না। এভাবে কয়েক দিন পরপরই ‘দ্য নিউ আলকেমি ছাত্রাবাসে’ রহস্যজনক কিছু না কিছু ঘটতে থাকে।

আরেক রাতের কথা। ঘুম আসছে না, বিছানায় শুয়ে শুয়ে মুঠোফোনে ব্রাউজ করছি। একটা সময় চোখে ঘুম লেগে আসে। পাশে ফিরে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি, এমন সময় এক ভয়ানক দৃশ্য দেখলাম। মার্বেলের মতো সবুজ দুটি চোখ আমার দিকে তাকিয়ে আছে। গায়ে সাদা পোশাক। ঠিক জিহান যেমন দেখেছিল। মুখ দিয়ে গোঙানির শব্দ করছে। মুখে ইঁদুরজাতীয় কিছু একটা। আমি কোনো দিকে না তাকিয়ে আগে জানালার কাচটা আটকে দিলাম। তারপর লাইটের সুইচ অন করলাম। আরিফুল মশারির ভেতর উবু হয়ে উঠে বসল! সে বলে উঠল, ‘এই বিড়াল আসল কোথায় থেকে?’ আমি বললাম, ‘এটাই তাহলে সেই ভূত!’
লেখা: বন্ধু, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা