বৃষ্টিভেজা গোধূলি সন্ধ্যায়

সামনে থেকে লেখক, আদিব, লেখকের সহধর্মিণী প্রিয়াংকা ও নাফিস
ছবি: লেখক

জুলাইয়ের দিনগুলোয় রোদের দাবদাহ যেন বেড়েই চলেছে। প্রকৃতির প্রতিটি প্রাণ এক ফোঁটা বৃষ্টির জন্য প্রার্থনায় নিমগ্ন। ১০ জুলাই উদ্‌যাপিত হলো ঈদুল আজহা। এবার ঘটা করে ঘুরতে যাওয়া না হলেও ভ্রমণপিপাসু মনে ইচ্ছেটা সুপ্ত রয়ে যায়। ১৪ জুলাই বৃহস্পতিবার বিকেলে নাফিসের ফোন।

- নাহিদ ভাই, আর ভালো লাগছে না, চলেন বের হই।

- হ্যাঁ আমিও একই পথের পথিক, চল।

নাফিস ঢাকায় পড়াশোনা করে, ভৈরব আসে কালেভদ্রে। ওর সঙ্গে পরিচয় বন্ধুসভার মাধ্যমে। কালের পরিক্রমায় সম্পর্কটা এখন একসূত্রে গাঁথা। যাত্রাপথে আমাদের সঙ্গে যোগ দিল সহধর্মিণী প্রিয়াংকা ও ছোট্ট বন্ধু আদিব।

- আকাশে মেঘ জমে আছে। বৃষ্টি নামবে যেকোনো সময়।

প্রিয়াংকার কথাকে সত্যি করতেই যেন ঝুম করে বৃষ্টি নামল। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম কাকভেজা হয়ে ঘুরব। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি আর হালকা বাতাসে আমাদের সঙ্গে অনেকেই সঙ্গী হলো। সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতুর নিচে যেন মেলা বসেছে। প্রতিবছর ঈদের পর ভৈরবসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার সবাই এখানে এসে জড়ো হয়। যান্ত্রিক জীবনকে ছুটি দিয়ে সবাই এক মনে মেতে উঠে আনন্দে, এ যেন প্রাণের উৎসব। কেউ এসেছে তার প্রিয় মানুষটির সঙ্গে, কেউ পরিবার, আবার কেউ বন্ধুরা মিলে।

সবার মুখের হাসি ভিন্ন, তবে খুশিটা এক।

কাকভেজা হাঁটার বিরতি নিলাম ব্রিজসংলগ্ন রূপকথা কফি হাউসে। কোল্ডকফিতে চুমুকের সঙ্গে আড্ডা যেন জমে গেল। আদিব খুব মনোযোগ সহকারে ফুঁ দিয়ে কফির গ্লাসে বাবল বানাচ্ছে, আর হাততালি দিচ্ছে। আকাশে মেঘের গর্জনের সঙ্গে বাড়ছে বৃষ্টির বেগ। ফটোসেশন করে আমরাও মগ্ন হলাম প্রকৃতির সঙ্গে। বৃষ্টির রিমঝিম শব্দ, পুরো কফি হাউসে মানুষের কলরব, এক মোহনীয় পরিবেশ। নাফিস, আদিব, প্রিয়াংকা, আমিসহ আমরা সবাই ভৈরব বন্ধুসভার সঙ্গে যুক্ত। প্রত্যেকেই কথাবন্ধু, আমি শ্রোতা হয়ে একমনে শুনছি, সবার বিশ্লেষণ। কী চমৎকার গুছিয়ে কথা বলছে, যুক্তি দাঁড় করাচ্ছে, আবার ব্যাখ্যাও দিচ্ছে। এ শিক্ষাটা আমরা পেয়েছি বন্ধুসভায় সুমন ভাইয়ের কাছে।

বৃষ্টি কমে গেলে নাফিসের ইচ্ছে পূরণ করতে আমরা রওনা দিই রোড সাইড বার্গার ক্যাফেতে। উদ্দেশ্য ভ্রমণ–তালিকা দীর্ঘায়িত করা ও রিকশা ভ্রমণ।

বৃষ্টির পর প্রকৃতি যেন তার চিরচেনা যৌবন ফিরে পেয়েছে। গাছের পাতায় ফোঁটাগুলো ল্যাম্পপোস্টের আলোয় মুক্তার মতো চকমক করছে, পিচ ঢালা শহরের পথে গাড়ির আলোর প্রতিফলন, হোটেলগুলোয় চা–প্রেমীদের ভিড়, পথিকের শূন্য দৃষ্টিতে বাড়ি ফেরার অপেক্ষা, নানা জিনিসের পসরা সাজানো হকারদের হইচই, ট্রাফিক পুলিশের ব্যস্ততা আর আকাশে এলোমেলো ছুটে চলা দূরন্ত মেঘের গর্জন, সবাই যেন আজ এই বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যার প্রতিনিধিত্ব করছে। শহরে বৃষ্টি নামে, প্রকৃতি শান্ত হয়। অশান্ত শুধু হয়ে রয় কিছু মানব মন। সবার ভাবনাকে ছাপিয়ে দৃষ্টি পড়ল প্রিয়াংকার দিকে। দূরন্ত বাতাস এলেমেলো করে দিচ্ছে ওর চুল, কাজল চোখের মায়াময় চাহনি আমার ভাবুক মনে নানা কবিতায় ছন্দ মেলাচ্ছে।

- আজ তোমাকে অন্যরকম সুন্দর লাগছে প্রিয়াংকা।

- কী রকম?

- অন্যরকম।

- তাই?

- হ্যাঁ।

তোমার ঘন দীঘল চুলে হারিয়ে যাচ্ছে মন,

ধোঁয়া উঠা চায়ের কাপে করব আলাপন।

ওর সেই চিরচেনা হাসি ফুটে উঠল ঠোঁটের কোণে। অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে আড়াল করতে চাচ্ছে, লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির মতো এঁকে ফেলতে ইচ্ছে করল ক্যানভাসে।

পরবর্তী ভ্রমণ পর্ব শেষ করে আমরা ফিরে চললাম নিজ নিজ গন্তব্যে। স্মৃতির পাতায় জমা হলো সুন্দর একটি দিন।

বন্ধু, ভৈরব বন্ধুসভা