তখন ষষ্ঠ কি সপ্তম শ্রেণিতে পড়ি। বার্ষিক পরীক্ষা যেদিন শেষ হয়েছে, ঠিক তার ১১ দিন পর দুর্গাপূজা শুরু হয়। একদিকে পড়ালেখার চাপমুক্তি, অন্যদিকে পূজার আমেজ। বাংলা খাতার শেষের পৃষ্ঠায় একটা তালিকা তৈরি করতে বসে গেলাম। বাচ্চাসুলভ মন তখন সবকিছু কিনে নিতে চাইত। শার্ট, প্যান্ট, জুতা থেকে করে শুরু করে ঘড়ি, চশমা সবই ছিল কেনার তালিকায়। বাবাকে বলতাম এসব আমার চাই। তিনিও কখনো না করেননি। কিনে দিতেন।
কেনাকাটা করার পর থেকে পূজার আগের দিন পর্যন্ত কতবার যে আলমারি খুলে নতুন কাপড়ের গন্ধ শুঁকেছি! অদ্ভুত এক ভালো লাগা কাজ করত। মহালয়ার দিন খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠতে হতো। ভোর পাঁচটায় মহালয়াকে ঘিরে অনুষ্ঠান। ঘুম ঘুম চোখে বাড়ির সবার মতো টেলিভিশনের স্ক্রিনে অপলক তাকিয়ে থাকতাম। হিন্দুশাস্ত্রের কাহিনিগুলোকে বিভিন্ন চরিত্রের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হতো। বেশির ভাগ দৃশ্য বুঝতাম না! তবু বসে থাকতাম। গ্রামের বাড়িতে তখন একটিমাত্র টেলিভিশন। আজও কানে বাজে মহালয়ার সেই ঐশ্বরিক কণ্ঠ, যে সুর যতবার শুনেছি, পশম দাঁড়িয়ে যায়। মনে হতে থাকে, এর চেয়ে পবিত্র সুর বুঝি কিছু হয় না।
আমাদের বাড়ির রেওয়াজ ছিল পূজার যেকোনো একদিন সবাই মিলে গাড়ি চড়ে দূরে কোথাও প্রতিমা–দর্শনে বের হব। আগের দিন রাতেই নতুন জামাকাপড় আলমারি থেকে বের করে বিছানার একটা পাশে রেখে দিতাম। কুয়াশাঢাকা ভোরে মায়ের ডাকে ঘুম থেকে উঠে পড়তাম। তারপর নতুন কাপড় পরে সবাইকে প্রণাম করতাম। সবাই প্রণামী দিত। সারা দিন বিভিন্ন মণ্ডপে ঘুরে বেড়াতাম। বাবা আমার হাত ধরে রাখতেন।
সময়ের আবর্তে ছোটবেলার সেই অনুভূতি আর নেই। সবকিছুই আছে, তারপরও যেন কিছু নেই! তবু এই দুর্গাপূজাই আমাদের প্রাণের উৎসব। এই উৎসব সম্প্রীতির মেলবন্ধন।
সহসভাপতি, সিলেট বন্ধুসভা