আমি মানুষ হতে চাই

অলংকরণ: আরাফাত করিম

স্বপ্নবাজদের মহাসমাবেশে আমি মানুষ হতে চাই বলতেই,
সবাই অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল, নদীর বহমান ধারার মতো হাসি ছুটে চলছে,
হাসতে হাসতে পড়ন্ত বেলায় হেলে পড়া সূর্যের প্রতিচ্ছবি একেকজন ধারণ করেছে।
আমার সরল স্বীকারোক্তি শুনে করতালিতে বোকা উপাধিতে ভূষিত করা হলো।
কয়েক কদম পেছন থেকে বিস্ফোরক শব্দ এল, মানুষ হবার কী আছে এমন!
আমরা তো জন্মসূত্রেই মানুষ। চেহারা, দৈহিক কাঠামোতে আপাদমস্তক মানুষ।
তারা ছোট সময়ে পড়া অসহায়দের বিনা মূল্যে চিকিৎসার জন্য ডাক্তার হতে চায়,
কিন্তু ডাক্তার হয়ে সব রোগীকে মুখস্থ টেস্ট দেওয়ার নিয়মে বোতলবন্দী হয়ে যায়।
অর্থের প্রেমে অদরকারে মানুষকে ছুরি–কাঁচির নিচে জিম্মি করে নিজস্বতায় মেতে ওঠে।

অথচ ভুলক্রমেও স্বীকার করে না সবার আগে মানুষ হতে চায়।
তারা বিসিএস বা যেকোনো মূল্যে প্রজাতন্ত্রের বড় চেয়ারে বসার স্বপ্নে বিভোর,
আইনের ফাঁকে শুভংকরের ফাঁকি দিয়ে গণমানুষের মগজধোলাই করবে,
অখল মানুষের ঘাড়ে চষে সহানুভূতির নীতিমালার পেছন দিয়ে ভয়ংকর ছুরি মারবে।
স্বার্থের আদিম খেলায় মত্ত তারা কখনো মানুষ হতে চায়।
তারা পৃথিবীর সব ইতিহাস, পুঁথিগত বিদ্যা খুব ভালো করে জানলেও
দৈহিক কাঠামোর বাইরে মনুষ্যত্ব ছাড়া মানুষের অস্তিত্ব শূন্য—শুধু এটুকুই অজানা তাদের।
তারা সবকিছু হতে চায়, কিন্তু মানুষ হতে চায় না কখনোই।

বড় ব্যবসায়ী হয়ে করোনা মহামারি বা মানুষের সবচেয়ে ক্রান্তিকালে রমরমা ব্যবসায় অভ্যস্ত তারা,
অর্থের অভাবে, করুণ দুর্দশাগ্রস্ত হয়ে মানুষ মৃতপ্রায় হলেও তারা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নির্ধারণ করে সুখের বাতায়নে দোল খায় মানুষের ভঙ্গুরতায়।
মানুষের ক্রান্তিলগ্নে দাঁড়িয়ে তারা ব্যবসায়ী হলেও মানুষ হতে চায় না।
কত সভা–সমাবেশ গেল, আমি আজও সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে পারিনি,
সবার হাসির তরঙ্গে ঘি ঢেলে বারবার বলি—আমি শুধু মানুষ হতে চাই,
যে পজিশন আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকুক না কেন, সেখানে বসেও আমি মানুষ হবার চর্চা করব।
পরবর্তী সকল গণসমাবেশেও আমার লক্ষ্য জানতে চাইলে বলব, আমি শুধুই মানুষ হতে চাই।