যে পথের যাত্রা এখনো শেষ হয়নি

মানুষও তো ঝরনার মতো। প্রাপ্তির খাতা শূন্য জেনেও হিসাবের মারপ্যাঁচ বন্ধ করে সে ত্যাগের ভালোবাসা খুঁজছে। মানুষ আর প্রকৃতি তো আলাদা নয়ছবি: লেখকের সৌজন্যে

আমার নেই কোনো পথ,
তবু কেনই–বা সেই পথ ধরে হাঁটা,
নেই কোনো দিক—তবু,
উদ্দেশ্যহীন ছোটা…
আজীবন পড়ে আসা একটা উক্তির যুক্তিখণ্ডন মাথায় ঘুরছে ‘পথ নয়, পথিকই পথের সৃষ্টি করে’। এদিকে আবার বঙ্কিমচন্দ্র এক ঝামেলা বাধিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘পথিক, তুমি পথ হারাইয়াছ!’

পথিক হিসেবে আমি সব সময় আউলা–ঝাউলা। কোনো নির্দিষ্ট একটি পথে বেশি দূর যেতে পারিনি। একেক সময় একেক পথের একেক প্রান্তে আটকে পড়েছি।
তবে এই যাত্রাপথে সহযাত্রী বন্ধু হলে সারা ব্রহ্মাণ্ড জয় করা সম্ভব। জীবন এত কঠিন নয়। রবীন্দ্রনাথের মতো বিশ্বাস করতাম, ‘পথ আমারে সেই দেখাবে যে আমারে চায়’।

নিয়ম না মানা আমি সেদিনও অদৃশ্য গহিনের পথ ধরে ছুটে গেলাম কোনো এক নির্ঝরের কাছে। এতটা ব্যাকুলতা নিয়ে কোনো পথ ধরে কোনো দিন হাঁটা হয়নি। খুব ইচ্ছা ছিল পথের এলোমেলো দুঃখগুলো ঝরনার কৌটাতে রেখে আসার। কিন্তু হঠাৎ অনুভূতির প্রকোষ্ঠে কড়া নেড়ে দেখি, ত্যাগের ভালোবাসা দিতে পাহাড় কাঁদে ঝরনা হয়ে!

যাত্রা শেষে শহরে ফিরেছি বছরখানেক আগে। এখনো সেই যাত্রা শেষ হলো না। এখানে ফিরে দেখি, মানুষও তো ঝরনার মতো। প্রাপ্তির খাতা শূন্য জেনেও হিসাবের মারপ্যাঁচ বন্ধ করে সে ত্যাগের ভালোবাসা খুঁজছে। মানুষ আর প্রকৃতি তো আলাদা নয়।

এত দিনে হয়তো সে তার গতি হারিয়েছে। তবু সে যৎসামান্য গতি নিয়ে সবাইকে তার ত্যাগের নিমন্ত্রণ জানাবে আর হয়তো প্রত্যাশায় থাকবে, ‘তোমাদের হৃদয়ের বিশালতায় লজ্জা পাক বিশাল আকাশ’।

চট্টগ্রাম