প্রথম শিক্ষক মা

সমাবর্তনে মায়ের সঙ্গে রোমানা পাপড়িছবি: লেখকের সৌজন্যে

স্কুলশিক্ষক প্রয়াত বাবাকে ছাড়া ২৪ বছর। আমরা চার ভাইবোন ও মা। অভিভাবক ও একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে পরিবারটিকে মা কীভাবে সামলেছেন এত বছর, এটা অকল্পনীয়। সব দুঃখ-কষ্ট মুখ বুঝে সহ্য করেছেন। নানা চড়াই-উতরাই পার হয়ে সন্তানদের লেখাপড়া করিয়েছেন। মায়ের চাহিদা কোনো দিন ছিল না, দেখিনি কোনো দিন কিছুর আবদার করতে। কোনো দিন আমাদের শাসনও করেননি। ওনার কেবল চাওয়া ছিল সব ভাইবোন যেন পড়াশোনা করি।

আমাদের প্রথম শিক্ষক মা। তিনি যখন রান্নাঘরে রান্না করতেন, পাশে বসিয়ে আমাদের পড়াতেন। বড় বোনরা যখন কলেজে, আমি তখন স্কুলে। আমাদের মধ্যে বেশ প্রতিযোগিতা ছিল রাতে কে কত সময় জেগে থেকে পড়াশোনা করবে। আর মা সারা দিন পরিশ্রম করে সন্ধ্যার পর শুয়ে পড়তেন। হঠাৎ ঘুম থেকে উঠে আমাদের পড়ার টেবিলে দেখলে বিশ্রামের জন্য তাগাদা দিতেন। সকাল ৮টায় খেয়ে স্কুলে যেতাম এবং ফিরতাম বিকেল ৫টায়। পুরোটা সময় মা না খেয়েই বসে থাকতেন আমাদের জন্য, একসঙ্গে খাবেন বলে।

মায়ের হাতের রান্না আমাদের বেশ প্রিয়। এখনো ভাইয়ের জন্য রান্না করে বিদেশেও পাঠান তিনি। বাবার মৃত্যুর পর সেই শূন্যতা মা কখনো বুঝতে দেননি। রৌদ্র কিংবা বৃষ্টিতেও স্কুল-কলেজে এসে আমাদের খোঁজখবর নিতেন। অনেক অভিভাবক পরীক্ষার সময় কেন্দ্রে যেতেন। কিন্তু আমার মা আসতেন না। এ সময় তিনি বাসায় বসে কোরআন তিলাওয়াত ও নফল নামাজ পড়ে আমাদের জন্য দোয়া করতেন। কখনো কখনো রোজাও রাখতেন। এখনো আমাদের সাফল্যের জন্য তিনি এসব করেন।

যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০তম সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করি এবং স্বর্ণপদক পাই, মা নিজে শাহবাগ থেকে ফুল কিনে আমার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা করতে আসেন। আমার জীবনের সেরা মুহূর্ত ছিল সেটা। মায়ের কিছু বৈশিষ্ট্য অনুপ্রেরণা জোগায়। তিনি কখনো ঋণ পছন্দ করেন না, মিতব্যয় ও মানুষকে মূল্যায়ন করেন। মায়ের সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করি।

সহকারী অধ্যাপক, পালি অ্যান্ড বুড্ডিস্ট স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।