যে মেয়েটা

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

যে মেয়েটা রোজ দুঃখ গেলে,
কষ্ট গেলে, একলা একা সংগোপনে;
সে–ও একদিন মিছে হাসে সবার সঙ্গে
খলখলিয়ে নিয়ম করে!

যে মেয়েটা ভীষণ কাঁদে রাতের পরে রাত
কাটিয়ে বালিশ গুঁজে মুখের পানে,
সে–ও একদিন ভোরের আলোয় মিশে থাকে সূর্যস্নানে।

যে মেয়েটা পুতুল খেলা ভেঙে গেলে কষ্ট পেত
রোজ মনের কোণে,
সে–ও এখন ঘর হারানোর শোকে পাথর ডিভোর্স পেয়ে।

যে মেয়েটা একলা ভীষণ চলতে গিয়ে ভয় পেয়েছি
খুব বলত মাকে,
সে–ও অনেক দায়িত্ব নিয়ে অন্যের ঘরের আঁধার ঘুচে।

যে মেয়েটা অনেক আদর–স্নেহের পরশ পেত
সবার শৈশব থেকে,
সে এখন আর পায় না আদর, কদর তো নেই
নিজের ঘরেই।

যে মেয়েটা পিতৃহারা–মাতৃহারা একলা একা
অনাদরে বেড়ে ওঠে,
সে–ও একদিন শৈশব স্মৃতি ঝেড়ে ফেলে ভালো
থাকে নিজের মতো।

যে মেয়েটা স্বপ্ন দেখে হরেক রকম কাজ করবে
সে বড় হয়ে,
সে মেয়েটা অনেক ঝড়ে ছন্নছাড়া তার জীবন
পথে লুটিয়ে পড়ে!

যে মেয়েটা ভালোবেসে ঘর বাঁধে তার প্রিয়
মানুষটির বুকে
সে কিন্তু তার ভালোবাসার আর মূল্য পায় না
একটুখানি সময় গেলেই।

যে মেয়েটা ভয়ে কাতর একটুখানি গায়ে সুই ফোঁড়ালে
সে–ও একদিন মাতৃত্বের স্বাদ পূরণ করতে রক্ত মাখে তার সারা গায়ে ক্ষত করে।

যে মেয়েটা পড়ার তাড়ায় মায়ের হাতেও খেত না
ঠিক তার পরীক্ষা এলে,
সে এখন মুখে আহার তুলেই না সবার খাওয়া বিনে।

যে মেয়েটা বাবা–ভাইয়ের ছায়াতলে থাকত বসে আরাম করে,
সে কিন্তু আর আরাম পায় না এতটুকুও নিজ
স্বামীর ঘরে।

যে মেয়েটা অন্ধকারে কিসের যেন ছায়া দেখে ভয় পেয়েছে বারে বারে,
সে এখন সব ভয়গুলোকে লড়াই করে মিশিয়ে
রাখে তার পায়ের কাছে।

যে মেয়েটা একাকিত্বের গ্লানি মুছে সবার সঙ্গে
রোজ অট্টহাসে,
সে কিন্তু আজ ভালো থাকে কেমন করে শিখে গেছে।