নেইমার ছাড়াও হাত দিয়ে গোল করেছেন কোন তারকারা

হাত দিয়ে গোল করে লাল কার্ড পেয়েছেন নেইমারছবি: রয়টার্স

আবারও আলোচনায় হাত দিয়ে গোল করার ঘটনা। ব্রাজিলের সর্বোচ্চ লিগ সিরি ‘আ’র ম্যাচে ২ জুন বোতাফোগোর বিপক্ষে সান্তোসের হয়ে খেলতে নেমে হাত দিয়ে গোল করে লাল কার্ড পেয়েছেন নেইমার। হেরেছে তাঁর দল সান্তোসও।

বোতাফোগোর এক খেলোয়াড়কে ফাউল করায় ম্যাচের প্রথমার্ধেই একটি হলুদ কার্ড দেখেন। দ্বিতীয়ার্ধের ৭৬ মিনিটে সান্তোসের একটি আক্রমণ বোতাফোগো গোলকিপার হাত দিয়ে রুখে দিলেও বল নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেননি। বল সামনে চলে গেলে ছুটে আসেন নেইমার, এক ডিফেন্ডার পা উঁচিয়ে বল ক্লিয়ার করতে গেলে কিছুটা পিছিয়ে থাকা নেইমার আগেভাগেই ডান হাত দিয়ে বল জালে পাঠিয়ে দেন। এতে রেফারি প্রথমে হলুদ কার্ড দেখান, এরপর লাল কার্ড।

১৯৮৬ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ডিয়েগো ম্যারাডোনার হাত দিয়ে করা সেই বিতর্কিত গোল
ফাইল ছবি

ফুটবলে হাত দিয়ে গোল করার ঘটনা এবারই প্রথম নয়। সবচেয়ে বেশি আলোচিত ১৯৮৬ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ডিয়েগো ম্যারাডোনার করা সেই বিতর্কিত গোল। যেটি ‘হ্যান্ড অব গড’ নামে পরিচিত। এরপর হাত দিয়ে গোল করার ঘটনা আরও অনেকবার ঘটেছে। এই তালিকায় রয়েছে লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর মতো তারকাদের নামও। এমন কয়েকটি আলোচিত ঘটনা নিচে উল্লেখ করা হলো—

১. ডিয়েগো ম্যারাডোনা (প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড): ১৯৮৬ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে রেফারির চোখ এড়িয়ে হাত দিয়ে গোল করেছিলেন ডিয়েগো ম্যারাডোনা। যে গোলের প্রসঙ্গে পরে আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি নিজেই বলেছিলেন, সেটি ছিল ‘হ্যান্ড অব গড’ বা ‘ঈশ্বরের হাত’। সেই গোল ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম বিতর্কিত বিষয়গুলোর একটি। ইংলিশ গোলরক্ষক পিটার শিলটনকে বোকা বানিয়ে হাত দিয়ে গোল করেছিলেন সর্বকালের অন্যতম সেরা এই ফুটবলার।

২. থিয়েরি হেনরি (প্রতিপক্ষ আয়ারল্যান্ড): ২০১০ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের গুরুত্বপূর্ণ একটি ম্যাচে মুখোমুখি হয় ফ্রান্স বনাম আয়ারল্যান্ড। খেলা নির্ধারিত সময়ে ১-১ গোলে ড্র হয়। অতিরিক্ত সময়ের ১০২ মিনিটে আইরিশ গোলপোস্ট বরাবর ফ্রি-কিক নেন ফ্লোরেন্ট মালুদা। বলটি প্রথমে হাত দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করেন থিয়েরি হেনরি, এরপর অন্য হাত দিয়ে বলটি জালে জড়াতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বলটি জালে না গিয়ে উইলিয়াম গ্যালাসের মাথায় যায়। গ্যালাস সেটিকে হেড দিয়ে গোল করলে ফ্রান্স জয়লাভ করে। এর মধ্য দিয়ে আইরিশদের বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন ভেস্তে যায়।

৩. লিওনেল মেসি (প্রতিপক্ষ এস্পানিওল): ২০০৭ সালে লা লিগার একটি ম্যাচে নগর প্রতিপক্ষ এস্পানিওলের বিপক্ষে ১-০ গোলে পিছিয়ে পড়েছিল বার্সেলোনা। স্কোর সমতায় আনতে মরিয়া হয়ে ওঠে দলটি। ম্যাচের তখন ৪২ মিনিট। হেড দিতে গিয়ে বলকে হাত দিয়ে জালে পাঠিয়ে দেন মেসি। অলৌকিকভাবে এই ঘটনা ম্যাচ অফিসিয়ালদের দৃষ্টিগোচর হয়নি! ফলে গোলটিও বাতিল হয়নি।

৪. রাউল গঞ্জালেজ (প্রতিপক্ষ লিডস ইউনাইটেড): ২০০১ সালের চ্যাম্পিয়নস লিগের একটি ম্যাচ। রাউল গঞ্জালেজের রিয়াল মাদ্রিদের প্রতিপক্ষ লিডস ইউনাইটেড। ফ্রি-কিক থেকে আসা বল হাত দিয়ে জালে পাঠিয়ে দেন রাউল। অলৌকিকভাবে এই ঘটনাও ম্যাচ অফিসিয়ালদের নজরে আসেনি! ফলে গোলটিও বাতিল হয়নি। শেষ পর্যন্ত রিয়াল মাদ্রিদ জয়লাভ করে ৩-২ ব্যবধানে। ম্যাচ শেষে রেফারি লিডসের ড্রেসিংরুমে গিয়ে ক্ষমাও চেয়েছেন। পরবর্তী সময়ে উয়েফা রাউলকে ৭,৬০০ ইউরো জরিমানা করে এবং এক ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ করে।

৫. লুইস সুয়ারেজ (প্রতিপক্ষ ঘানা): ২০১০ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হয় উরুগুয়ে ও ঘানা। নির্ধারিত সময়ে ড্রয়ের পর ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। ঘানার আক্রমণের মুখে সুয়ারেজ নিজেদের গোলপোস্টে গিয়ে হাত দিয়ে গোল ঠেকিয়ে দেয়। এ ঘটনায় পেনাল্টি পায় ঘানা। কিন্তু সেটিতে গোল করতে ব্যর্থ হয় তারা। পরবর্তী সময়ে দুর্ভাগ্যজনকভাবে টাইব্রেকারেও ঘানা হেরে যায়। উরুগুয়ে তারকা সেই গোলটি হাত দিয়ে না ঠেকালে হয়তো সেমিফাইনাল খেলত ঘানা!

৬. ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো (প্রতিপক্ষ ম্যানচেস্টার সিটি): রিয়াল মাদ্রিদ বনাম ম্যানচেস্টার সিটির মধ্যকার চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনাল। ম্যাচটি ১-০ গোলে জয়লাভ করে রিয়াল। তবে ম্যাচের একটি মুহূর্তে হেড দিতে গিয়ে রোনালদো বুঝতে পারেন বলটি অনেক উঁচুতে, তখন দুই হাত দিয়ে বল ধরে সেটিকে জালে পাঠিয়ে দেন। আইন অনুযায়ী এ ধরনের ঘটনা শাস্তিযোগ্য। কিন্তু আগে থেকেই পর্তুগিজ মহাতারকা অফসাইডে থাকায় কোনো গোল হয়নি এবং শাস্তিও পেতে হয়নি।