মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব ও সচেতনতার পথ

ছবি: ফ্রিপিক

ছোটবেলা খুব একটা সহজ ছিল না। প্রতিদিন পিঠে ভারী ব্যাগ, স্কুলের চাপ, প্রাইভেট টিউশন, পড়াশোনার চাপ, আর অপ্রয়োজনীয় মানসিক চাপ যেন আষ্টেপৃষ্ঠে ধরে রেখেছিল। এক অদৃশ্য বোঝা অজান্তেই আমার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুখস্থ শিক্ষার ওপর নির্ভরতা, ক্রিয়েটিভিটির কম গুরুত্ব এবং প্রতিদিনের চাপ আমাকে ছোটবেলায়ই মানসিকভাবে নিশ্বাসহীন করে তুলেছিল।

তবে শৈশব মানেই শুধু নিজস্ব অভিজ্ঞতা নয়। সহপাঠী, বন্ধু, প্রতিবেশী—আমার পরিচিত অনেকেই মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে ভুগেছে। তখন মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন না থাকায় আমিও সবার মতো বলতাম, ‘মানসিক রোগ আবার কী!’ কিন্তু জীবন আমাকে শিখিয়েছে, মানসিক চাপ এবং সমস্যা কোনো মজা নয়। একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে বোঝা যায় সচেতনতা কতটা জরুরি।

গবেষণায় দেখা যায়, মানসিক স্বাস্থ্য সমর্থন শিশু ও কিশোরদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডব্লিউএইচও (২০২১) অনুসারে, বিশ্বজুড়ে প্রায় ২০–২৫ শতাংশ শিশু এবং কিশোর জীবনের কোনো না কোনো সময়ে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগে। একই সময়ে, ইউনিসেফের (২০২২) রিপোর্টে দেখা গেছে, স্কুল ও সামাজিক চাপ, পরিবারিক প্রত্যাশা এবং বন্ধুত্বের অভাব শিশুদের উদ্বেগ, বিষণ্নতা এবং আত্মবিশ্বাস হ্রাসের কারণ হতে পারে।

আমার নিজের অভিজ্ঞতায়, সচেতনতা এবং পাশে থাকা একমাত্র মুক্তির পথ। কেবল সহানুভূতি দেখানো যথেষ্ট নয়। মানুষের অনুভূতি শোনা, বোঝা এবং প্রয়োজনে পেশাদার সহায়তার দিকে উৎসাহিত করা জরুরি। বিভিন্ন সময় মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগার কারণে আমি বুঝি মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সংবেদনশীল হওয়া, সচেতন হওয়াই এই রোগ থেকে মুক্তির একমাত্র পথ। তাদের পাশে থাকা, সময় দেওয়া ও সবচেয়ে বড় কথা তাদের কথা শোনা এই রোগের সবচেয়ে বড় ওষুধ। পরিবার, শিক্ষক এবং সমাজকে মানসিক স্বাস্থ্যসচেতন করার মতো কার্যক্রম পরিচালনা হতে পারে একটা বড় পরিবর্তনের সূচনা।

এমবিবিএস (চীন), স্বতন্ত্র গবেষক ও সমাজকর্মী