ঘৃণা নয়, ভালোবাসাই পারে মাদকাসক্তকে ফিরিয়ে আনতে

আজ আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবস। দিনটি উপলক্ষে একজন মাদকাসক্তকে আলোর পথে ফিরিয়ে আনার উপায় নিয়ে লিখেছেন ঢাকা সিটি হাসপাতাল লিমিটেডের সাইকোথেরাপিস্ট ও কনসালট্যান্ট মাহমুদা মুহসিনা

সন্তান যদি ভুল পথে পা রাখে, পরিবারই হতে পারে সবচেয়ে বড় নিরাময় কেন্দ্রছবি: এআই/বন্ধুসভা

মাদক সেবনকারীকে ঘৃণা করা যাবে না। ভালোবাসাই পারে তাঁকে এই অন্ধকার পথ থেকে আলোতে ফিরিয়ে আনতে। ঘৃণা মানুষকে আরও একাকী করে তোলে, সমাজ থেকে দূরে ঠেলে দেয়। কিন্তু ভালোবাসা, সহানুভূতি আর বোঝাপড়া পারে মানুষের ভেতরের যন্ত্রণাকে শান্ত করতে, নতুন করে বাঁচার আশা দিতে।

যে ব্যক্তি মাদক সেবন করে—হয়তো সে ভেঙে পড়েছে, হতাশ, অসহায় বা ভুল দিশায় পথ হাঁটছে। এই অবস্থায় যদি তাকে দূরে ঠেলে দেওয়া হয়, তাহলে সে কখনোই ফিরে আসতে পারবে না। আর যদি হাত বাড়িয়ে দেওয়া হয়; একটুকু ভরসা, সহানুভূতির একটি কথা, ভালো থাকার একটা পথ দেখানো—তবেই সে সাহস পাবে বদলানোর। ভালোবাসা বদলে দিতে পারে জীবন।

মাদক সেবনকারীকে কাউন্সেলিং দিন, কিন্তু বিচার নয়। প্রশ্ন করুন, কিন্তু আঘাত নয়। পাশে দাঁড়ান। কারণ, তার দরকার একজন মানুষ, বিচারক নয়। ঘৃণা নয়, ভালোবাসায় গড়তে হবে সমাজ। যেখানে প্রত্যেক হারিয়ে যাওয়া মানুষ ফিরে পাবে নতুন জীবনের আশা।

মাদক সেবনকারীকে ঘৃণা নয়
সে একজন মানুষ। তারও কষ্ট আছে। মাদক গ্রহণ তার সমস্যা, কিন্তু সে নিজে নয়। সে হয়তো মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে; একাকী, অবহেলিত অথবা শৈশবের কোনো ট্রমার শিকার। মাদক গ্রহণ তার যন্ত্রণার প্রকাশ, কোনো খারাপ মানুষ হওয়ার প্রমাণ নয়। সহানুভূতিই পারে কাউকে বদলাতে।

ঘৃণা একজন ব্যক্তিকে অপরাধী করে তোলে। আর ভালোবাসা তাকে মানুষ করে তোলে। আপনি যদি কাউকে অবজ্ঞা করেন, সে নিজেকেই ত্যাগ করে দেবে। কিন্তু আপনি যদি তাকে বোঝেন, পাশে থাকেন, তবেই সে বদলাবে।

আমরা কেউই নিখুঁত নই। জীবনের ভুল পথে হাঁটা আমাদের সবারই হতে পারে। কেউ প্রেমে পড়ে বিপথে যায়, কেউ ক্ষোভে, কেউ দুঃখে। আজ একজন পথ হারিয়েছে, কাল হয়তো আমিও পারতাম হারাতে। কারণ, ভালোবাসা মানুষকে বাঁচায়, ঘৃণা ধ্বংস করে। একটা সহানুভূতির কথা, একটা বিশ্বাসের চোখ, একটা শক্ত করে ধরা হাত মাদক সেবনকারীকে ফিরিয়ে আনতে পারে।

করণীয়
মানুষ হিসেবে দেখতে হবে, তার গল্প শুনতে হবে, পাশে থাকতে হবে। তবেই সে আসতে পারবে আলোতে। ভালোবেসে সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। তখন সে এ পথ থেকে সহজে বেরিয়ে আসতে পারবে। অবশ্যই পেশাদার কারও কাছে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। এটাই হবে উপযোগী ভালোবাসা। এই কঠিন পথচলায় তার পাশে থাকা।

আমরা অনেক সময় ভুলে যাই, মাদকাসক্তি কোনো অপরাধ নয়, এটি একটি মানসিক ও শারীরিক রোগ। সন্তান যদি ভুল পথে পা রাখে, তাকে তিরস্কার করে নয়, ভালোবেসে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। পরিবারই হতে পারে সবচেয়ে বড় নিরাময় কেন্দ্র।