আপনার সুখ নির্ভর করছে কীভাবে চিন্তা করেন তার ওপর

চিন্তার ওপর অনুভূতির অনেক প্রভাব থাকে এবং শেষ পর্যন্ত এটি আচরণকেও প্রভাবিত করেছবি: এআই/বন্ধুসভা

কখনো কি ঘুমের মধ্যে এমন স্বপ্ন দেখেছেন, যেটা বাস্তবের মতো অনুভূতি দিয়েছে, এমনকি ঘুম ভাঙার পরেও? যেমন এমন স্বপ্ন যেখানে আপনার খুব কাছের কেউ মৃত্যুবরণ করেছে, আর সেটা যে সত্য নয়, তা ঘুম ভাঙার পরও বিশ্বাস করতে কয়েক মিনিট লেগে গেছে।

কখনো কি ভেবেছেন কেন এমনটা হয়? কারণ, আমাদের অনুভূতি খুবই শক্তিশালী। কখনো কখনো স্বপ্নের সঙ্গে জড়ানো আবেগ থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র উপায় হলো আমাদের ভাবনাকে একটু বদলে নেওয়া। অর্থাৎ নিজেকেই নিজের বলতে হবে যে এটি কেবলই একটি স্বপ্ন, বাস্তবে এমন কিছু ঘটেনি।

আমাদের চিন্তার যে ক্ষমতা অনুভূতিকে প্রভাবিত করে, তা আমাদের দৈনন্দিন জীবনেও প্রবাহিত হয়। জীবন সব সময় একই থাকে না। এমনও সময় আসে, যখন জীবন খুবই সহজভাবে কেটে যায়, আবার কখনো খুবই কঠিন মনে হয়। আপনিও হয়তো জীবনের বিভিন্ন পয়েন্টে নিজেকে এমন পরিস্থিতিতে পেয়েছেন এবং প্রতিবার ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে মোকাবিলা করেছেন। এর কারণ হলো চিন্তার ওপর অনুভূতির অনেক প্রভাব থাকে এবং শেষ পর্যন্ত এটি আচরণকেও প্রভাবিত করে।

কী অনুভব করছি, তা অনেক সময় আমাদের চিন্তার ওপর নির্ভর করে। আমাদের সুখে থাকা নির্ভর করে আমাদের চিন্তার মানের ওপর। আমরা সুখী। কারণ, আমরা আমাদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোকে ভালো হিসেবে ব্যাখ্যা করি। অন্যদিকে যদি মনে করি আমাদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো খারাপ, তখন আমরা অসুখী অনুভব করি। আমাদের চিন্তা জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো ব্যাখ্যা করে এবং এর ফলে এগুলো আমাদের অনুভূতির ওপর গভীর প্রভাব ফেলে।

এখানেই বিষয়টা কিছুটা জটিল হয়ে যায়। যখন বাস্তবতা ঘটতে থাকে, আমরা ভাবি যে এটিকে ব্যাখ্যা করার একটাই উপায় আছে এবং আলোচনা বা নমনীয়তার খুবই কম সুযোগ রয়েছে। আমাদের কাছে সবকিছু কালো-সাদা মনে হয়। কিন্তু আমরা যখন জীবনযাপনের মাধ্যমে অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করি, তখন এ চিন্তার ধরনে পার্থক্য খুঁজে পাই।

জীবনে অনেক বাধা আসে। কখনো এই বাধাগুলোকে সহনশীলভাবে মোকাবিলা ও সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা করি। আবার কখনো সমাধান খুঁজে পাওয়া অনেক কঠিন হয়ে যায়। কারণ, মানুষের রাগ সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। যখন এমন হয়, তখন আমাদের চিন্তা আমাদের বলে, ‘এটা হওয়া উচিত নয়, এটি পরিকল্পনায় ছিল না!’ আবার যখন আমাদের চিন্তা সমাধানমুখী থাকে, তখন এমন অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি সহজভাবে মোকাবিলা করে ফেলি।

আরও পড়ুন

একটি উদাহরণ দেওয়া যাক। ধরুন, এক সকালে ঘুম ভাঙার পর আপনার মাথাব্যথা করছে। তখন চেষ্টা করবেন মাথাব্যথা কমানোর। হয়তো পানি খাবেন, নাশতা করবেন কিংবা কোনো ওষুধ খাবেন বা মলম ব্যবহার করবেন। অর্থাৎ আপনি সমস্যা থেকে মুক্তির সমাধান খুঁজছেন। কেন মাথাব্যথা হলো, সেটা নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট করছেন না।

একই বিষয়ে যাঁদের মাথায় সব সময় নেতিবাচক চিন্তাভাবনা ঘোরে, তাঁরা হয়তো বলতে পারেন, ‘মাথাব্যথা বিরক্তিকর! কখন যাবে! এ সময়ে কেন মাথাব্যথা হলো?’
আবার কেউ কেউ আরও এক ধাপ বেশি ভাববেন। বলবেন, ‘আমার কোনো ভুল হয়েছে কি? যদি আমার ব্রেন টিউমার থাকে, যদি মারা যাই? এখনই ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে….।’ এ ধরনের চিন্তাধারা সবচেয়ে বিপজ্জনক।

যদি আপনি প্রথম উদাহরণের ব্যক্তি হয়ে থাকেন, তাহলে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সহজ হবে। কারণ, আমাদের সুখে থাকা ইতিবাচক চিন্তার ওপর নির্ভর করে।

আমাদের সঙ্গে যা কিছু ঘটে, তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো আমরা সেই ঘটনাগুলোকে কীভাবে মোকাবিলা করি। আরেকটি উদাহরণ দিই। ধরুন, আপনি ট্রাফিক জ্যামে আটকা পড়লেন। কিছু চালক এই পরিস্থিতিতে খুশি না হলেও তাঁরা আশপাশের অন্য চালকদের সঙ্গে শিষ্টাচার দেখান। কিন্তু কেউ কেউ আছেন প্রচণ্ড রাগী, তাঁরা ক্রমাগত হর্ন বাজাতে থাকে। যাঁরা এমন ছোট ছোট ব্যাপারে রেগে যান, সাধারণত তাঁদের জীবন কঠিন হয়। কারণ, তাঁদের চিন্তা সমাধান খুঁজে বের করার পরিবর্তে রাগ দেখানোকে প্রাধান্য দেয়।

এটি সত্য যে জীবনে ঘটে যাওয়া অনেক ঘটনাই আমাদের রাগান্বিত করবে। কিন্তু একই সময়ে আমাদের চিন্তাই বাস্তবতা তৈরি করে। যদি কোনো ঘটনা বা মুহূর্ত আমাদের দুঃখিত করে এবং ভাবি যে এখনই মন খারাপ করতে হবে, তবে এটি আমাদের বাস্তবতা হয়ে যাবে। পরিস্থিতি যা–ই হোক না কেন, সব সময় ইতিবাচক চিন্তা করতে হবে।

জীবনে চলার পথে ছোট-বড় অনেক চ্যালেঞ্জ আসবে। একবার নিজেদের চিন্তার নিয়ন্ত্রণ নিতে শিখতে পারলে যেকোনো চ্যালেঞ্জই জয় করা সম্ভব।

সূত্র: সাইকোলজি টুডে