এটি দুর্ঘটনা বা হিংস্রতা নয়, বরং ঘনবসতি, খাদ্যস্বল্পতা বা জৈবিক পরিকল্পিত বাস্তুবৃত্তের অংশ হিসেবে ঘটে থাকে।
প্রাণিজগতে সন্তানের প্রতি মা-বাবার ভালোবাসা, যত্ন ও ত্যাগের দৃশ্যের ভিডিও আমরা প্রায় সময়ই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখি। অনেকেই এগুলো শেয়ার করেন। প্রাণীরা তাদের সন্তানদের খুবই যত্নের সঙ্গে লালনপালনের মাধ্যমে বড় করে তোলে। তবে ব্যতিক্রমী কিছু প্রাণী রয়েছে, যেখানে সন্তান তাদের মাকে মেরে ফেলে বা খেয়ে ফেলে।
এই আচরণকে বলা হয় ম্যাট্রিফ্যাগি। অর্থাৎ যেখানে সন্তানেরা মা বা পিতামাতাকে খেয়ে ফেলে। এটি দুর্ঘটনা বা হিংস্রতা নয়, বরং ঘনবসতি, খাদ্যস্বল্পতা বা জৈবিক পরিকল্পিত বাস্তুবৃত্তের অংশ হিসেবে ঘটে থাকে। এই ব্যাপারটি কয়েক প্রজাতির প্রাণীর মধ্যে খুবই সাধারণ ঘটনা; বিশেষ করে মাকড়সা এবং কিছু পোকামাকড়ের মধ্যে।
কালো লেইস-ওয়েভার মাকড়সা (অ্যামাউরোবিয়াস ফেরক্স): মাকড়সার এই প্রজাতি মা হওয়ার পর প্রথমেই কিছু অনিষিক্ত ডিম উৎপাদন করে। ডিমগুলো বাচ্চাদের খাদ্য। ডিমগুলোকে বলা হয় ‘ট্রফিক ডিম’, যা বাচ্চা মাকড়সার প্রথম খাবার।
ডিম শেষ হয়ে গেলে পরবর্তী ধাপে বাচ্চারা তাদের মাকে খাদ্য হিসেবে ভক্ষণ করে। এই প্রক্রিয়া কোনো দুর্ঘটনা নয়; বরং এটি তাদের জীবনচক্রের একটি প্রাকৃতিক ও স্বাভাবিক অংশ। মায়ের মৃত্যুর মাধ্যমে বাচ্চা মাকড়সাদের টিকে থাকা ও বিকাশের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
কাঁকড়া মাকড়সা (অস্ট্রেলোমিসিডিয়া এরগ্যান্ড্রোস): এই প্রজাতি জীবনে কেবল একবারই ডিম পাড়ে। সেই ডিম ফুটে বাচ্চা হয়। পরবর্তী সময়ে ট্রফিক ডিম বা অন্য কোনো খাবার দিয়ে বাচ্চাদের খাওয়ানোর সুযোগ পায় না। ফলে বাচ্চা মাকড়সাগুলো জন্মের কিছু সময় পরই নিজের মাকে খাওয়া শুরু করে। এই আচরণটি তাদের জৈবিক বা প্রাকৃতিকভাবে নির্ধারিত। মূলত বাচ্চাগুলো জন্মের পর যাতে দ্রুত ও পর্যাপ্ত পুষ্টি পায়, সে জন্য এই পদ্ধতি।
মরুভূমির মাকড়সা: মরুভূমি অঞ্চলের কিছু মাকড়সা প্রজাতি যেমন স্টেগোডিফাস লিনিয়াটাসের ক্ষেত্রে, মা শুরুতে তার বাচ্চাদের আংশিক হজম করা খাবার খাওয়ায়। কিন্তু সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তার শক্তি কমে আসে। তখন মা মাকড়সার শরীর ভেতর থেকে ভেঙে পড়তে শুরু করে। প্রায় দুই সপ্তাহের মধ্যে অভ্যন্তরীণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দ্রবীভূত হয়ে তরলে পরিণত হয়, যা বাচ্চা মাকড়সারা খেয়ে নেয়। মায়ের বাইরের খোলস অবশিষ্ট থাকা পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া চলতে থাকে।
আফ্রিকান সামাজিক মাকড়সা (স্টেগোডিফাস ডুমিকোলা): মায়ের পাশাপাশি এই প্রজাতির একাধিক নারী মাকড়সা মিলে বাচ্চা বড় করতে সহায়তা করে। যখন খাদ্য কমে আসে, তখন বড় মাকড়সার কয়েকটিকে বাচ্চারা খেয়ে ফেলে।
হাম্প ইয়ারউইগস (আনেচুরা হারমান্ডি): ম্যাট্রিফ্যাগি মূলত মাকড়সা প্রজাতির মধ্যেই হয়ে থাকে। তবে কিছু কিছু পোকামাকড়েও এই বৈশিষ্ট্য দেখা যায়, যেমন হাম্প ইয়ারউইগস। যখন খাদ্য শেষ হয়ে যায়, তখন বেঁচে থাকার জন্য বাচ্চারা তাদের মাকে খেতে শুরু করে।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া