প্রাচীনকাল থেকেই সৌন্দর্যচর্চা ছিল মানুষের জীবনের অংশ। রোমান ও মিসরীয়রা ত্বকের যত্নে ব্যবহার করতেন বিভিন্ন প্রাকৃতিক হার্ব ও অয়েল ম্যাসাজ। ত্বকের উজ্জ্বলতা ও স্বাস্থ্য রক্ষায় এসব ছিল অত্যন্ত কার্যকর। সময়ের পরিক্রমায় এই রূপচর্চা এসেছে আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের ছোঁয়ায়। আর সেই পথ ধরেই এসেছে অ্যাস্থেটিক ফেসিয়াল; একটি বৈজ্ঞানিক ত্বক থেরাপি যা একই সঙ্গে প্রাধান্য দেয় ত্বকের সৌন্দর্য ও সুস্থতাকে।
আধুনিক রূপচর্চায় অ্যাস্থেটিক ফেসিয়ালের অবস্থান
আগে যেখানে চেহারার সৌন্দর্যচর্চাকে শুধুই রিল্যাক্সেশন বা শৌখিন রূপচর্চা হিসেবে দেখা হতো, এখন সেটি হয়ে উঠেছে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের ক্লিনিক্যাল পদ্ধতি। অ্যাস্থেটিক ফেসিয়াল আজকের দিনে একটি নির্ভরযোগ্য ও জনপ্রিয় থেরাপি, বিশেষ করে ঈদের মতো উৎসবকে কেন্দ্র করে।
এই ফেসিয়াল ত্বকজনিত সমস্যা অনুযায়ী কাস্টমাইজ করা হয়। যেমন পিগমেন্টেশন, আনইভেন টোন, সান ট্যান, অতিরিক্ত তৈলাক্ত বা অতিরিক্ত শুষ্ক ত্বক, ক্ষতিগ্রস্ত বা বয়স্ক ত্বক, অনুজ্জ্বল ও নিস্তেজ ত্বক।
ডার্মাটোলজিস্ট ও প্রশিক্ষিত ত্বকবিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই সেবা সাধারণত দেওয়া হয় অ্যাস্থেটিক ওয়েলনেস সেন্টারগুলোয়।
অ্যাস্থেটিক ফেসিয়ালের জনপ্রিয় কয়েকটি ধরন
হাইড্রা ফেসিয়াল: এই ফেসিয়ালে বিশেষ সিরাম ব্যবহার করা হয়, যা ত্বককে হাইড্রেট, এক্সফোলিয়েট ও ডিপ ক্লিন করে। নিয়মিত ক্লিনজিংয়ের বাইরে গিয়ে এটি ত্বককে গভীর থেকে পরিশুদ্ধ করে।
অক্সি ফেসিয়াল: ফেসিয়াল মাস্ক ও অক্সিজেন চেম্বার ব্যবহার করে ত্বকের রক্তসঞ্চালন বাড়ায় এবং সেলুলার লেভেলে পুষ্টি শোষণে সাহায্য করে।
ডুয়ো ফেসিয়াল: বিশেষভাবে সংবেদনশীল ত্বকের জন্য তৈরি এই ফেসিয়াল ব্রাইটেনিং সিরামের মাধ্যমে ত্বকের টোন ও টেক্সচারকে উন্নত করে। এটি খুবই কোমল ও সংবেদনশীল ত্বকের জন্য উপযোগী।
লো লেভেল এলইডি থেরাপি: ত্বকের ধরন অনুযায়ী বিভিন্ন রঙের এলইডি লাইট প্রয়োগ করা হয়:
ব্লু লাইট: তৈলাক্ত ত্বকের জন্য।
রেড লাইট: সাধারণ ও সংবেদনশীল ত্বকের জন্য। এই লাইট থেরাপি ব্রণ, চর্মপ্রদাহ ও ক্ষতিগ্রস্ত ত্বকের যত্নে কার্যকর।
এইচআইএফইউ (উচ্চতীব্রতাকেন্দ্রিক আলট্রাসাউন্ড): বয়সের ছাপ কমাতে ও স্কিন টোনিংয়ে ব্যবহৃত এই প্রযুক্তি ত্বককে ভেতর থেকে শক্ত করে। যদিও এটি ধীরে কাজ করে, তবে এর দীর্ঘস্থায়ী ফলাফল অত্যন্ত সন্তোষজনক।
বর্ষাকালের ঈদে ত্বকের বিশেষ যত্ন
এ বছর ঈদুল আজহা পড়েছে বর্ষাকালে। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতা বেশি। তাই ত্বকে ঘাম ও ধুলাবালুর প্রভাবও বেশি। এ সময় ত্বককে পরিষ্কার, সজীব ও শুষ্ক রাখা অত্যন্ত জরুরি। শুধু প্রসাধনী নয়, প্রয়োজন চিকিৎসানির্ভর রূপচর্চা, যেখানে ত্বকের আসল সমস্যাগুলোর সমাধান পাওয়া যায়।
অ্যাস্থেটিক ফেসিয়াল শুধু সৌন্দর্যচর্চা নয়, এটি একটি বৈজ্ঞানিক থেরাপি যা ত্বকের রূপ ও স্বাস্থ্য দুটোকেই সমান প্রাধান্য দেয়। ঈদের আগেই এই থেরাপি গ্রহণ করলে আপনি পাবেন সতেজ, উজ্জ্বল ও দীপ্তিময় ত্বক যা উৎসবের আনন্দকে করবে আরও প্রাণবন্ত।
লেখক: ওয়েলনেস অ্যান্ড বিউটি কনটেস্ট কনসালট্যান্ট এবং বন্ধুসভা জাতীয় পর্ষদের স্বাস্থ্য ও ক্রীড়া সম্পাদক।