হালুয়াঘাট থেকে কুয়াকাটা—বাইসাইকেলে দেশের দুই প্রান্তে

সীমান্তবর্তী উপজেলা হালুয়াঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে শুরু করে দক্ষিণের সাগরকন্যা কুয়াকাটা পর্যন্ত—তিন দিনে বাইসাইকেলে পাড়ি দিয়েছেন সাতজন সাহসী সাইক্লিস্টছবি: সংগৃহীত

দেশের উত্তর প্রান্তের সীমান্তবর্তী উপজেলা হালুয়াঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে শুরু করে দক্ষিণের সাগরকন্যা কুয়াকাটা পর্যন্ত—তিন দিনে বাইসাইকেলে পাড়ি দিয়েছেন সাতজন সাহসী সাইক্লিস্ট। যাঁদের মধ্যে একজন ছিলেন গাজীপুর বন্ধুসভার বন্ধু নাছির উদ্দিন। প্রায় ৪৭০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে তাঁরা প্রমাণ করেছেন, ইচ্ছাশক্তি থাকলে সীমাবদ্ধতা বলে কিছু নেই।

এই অভিযাত্রাকে সাইক্লিংয়ের ভাষায় বলা হয় ‘ক্রস কান্ট্রি রাইড’, যা দেশের এক প্রান্তের জিরো পয়েন্ট থেকে অপর প্রান্তের জিরো পয়েন্টে শেষ হয়। অংশগ্রহণকারীরা হলেন—নাসির উদ্দিন, শরীফ খান, লোকমান হাকিম, পাভেল মিয়া, আসিফ আকবর, রানা মিয়া ও কামরুল রহমান। সবাই বিভিন্ন পেশার হলেও সাইক্লিংয়ের প্রতি ভালোবাসা ও দেশকে জানার আগ্রহ তাঁদের একসূত্রে বেঁধেছে।

প্রথম দিন: হালুয়াঘাট থেকে গাজীপুর (৮ জুন)
৮ জুন সকালে যাত্রা শুরু হয় হালুয়াঘাট উপজেলার গোবরাকুড়া কড়ইতলি জিরো পয়েন্ট থেকে। প্রথম দিনেই তাঁরা প্রায় ১৬৫+ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে পৌঁছে যান গাজীপুরে। কঠিন রাস্তাঘাট, কখনো বৃষ্টি, কখনো প্রচণ্ড গরম—সবকিছু উপেক্ষা করে এগিয়ে যান লক্ষ্যপানে।

দ্বিতীয় দিন: গাজীপুর থেকে বরিশাল (৯ জুন)
৯ জুন তাঁরা গাজীপুর থেকে যাত্রা শুরু করে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেন এবং বরিশাল গৌরনদী উপজেলায় রাত কাটান। পদ্মা সেতু পার হওয়ার অভিজ্ঞতা তাঁদের জন্য ছিল এক নতুন রোমাঞ্চ। দেশের ভৌগোলিক বৈচিত্র্য, স্থানীয় মানুষের আতিথেয়তা—সব মিলিয়ে দিনটি ছিল স্মরণীয়।

তৃতীয় দিন: বরিশাল থেকে কুয়াকাটা (১০ জুন)
১০ জুন ভোরে শুরু হয় অভিযানের শেষ ও সবচেয়ে প্রতীক্ষিত দিন। প্রায় ১৫৩+ কিলোমিটার পথ বাইসাইকেলে অতিক্রম করে সন্ধ্যায় তাঁরা পৌঁছে যান কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের জিরো পয়েন্টে। ক্লান্ত শরীর হলেও চোখেমুখে ছিল বিজয়ের আনন্দ। একে অপরকে আলিঙ্গন করে, উল্লাস করে তাঁরা উদ্‌যাপন করেন কৃতিত্ব।

এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা, অনুপ্রেরণার গল্প
অভিযান সম্পর্কে নাসির উদ্দিন বলেন, ‘এই রাইডটা শুধু সাইকেল চালানো নয়, এটা ছিল নিজের মানসিক ও শারীরিক সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ার একটি পরীক্ষা। আমরা দেখাতে চেয়েছি—দেশজুড়ে চলা যায় সাইকেলেই, যদি মন থেকে চাওয়া যায়।’

তাঁদের এই সফল অভিযাত্রা শুধু সাইক্লিংপ্রেমীদের নয়, বরং তরুণ সমাজকে শারীরিক ফিটনেস, পরিবেশবান্ধব যাতায়াত এবং দেশপ্রেমে উজ্জীবিত করবে বলে আশা করেন তাঁরা। জানান, তিন দিনের বাইসাইকেলযাত্রা শুধুই রাস্তা পাড়ি দেওয়া নয়—এটি ছিল আত্মবিশ্বাস, ধৈর্য, দলীয় সহযোগিতা এবং দেশকে ভালোবাসার এক অনন্য প্রকাশ। হালুয়াঘাট থেকে কুয়াকাটা—এই পথ হয়ে থাক সব তরুণের জন্য অনুপ্রেরণার এক মানচিত্র।

সাধারণ সম্পাদক, গাজীপুর বন্ধুসভা