আয় বাড়ছে না, তবে খরচ কেন বাড়ছে

সুন্দর জীবনের জন্য এখন থেকেই চাই অর্থনৈতিক সচেতনতাছবি: এআই/বন্ধুসভা

টাকা জমানো এবং খরচ দুটোই একরকম নেশা। বিশেষ করে মাটির ব্যাংকে পয়সা ফেলার অভ্যাস প্রায় সবারই ছোটবেলায় ছিল। তবু জমানো থেকে খরচের প্রবণতা বেশি হয়ে যায়। হাতে টাকা এলেই হাত ইঁদুরের মতো কুটকুট করে টাকাকে কেমন যেন খেয়ে ফেলে। এই আয়-ব্যয়ের ভারসাম্যহীনতা একদিন আমাদের ঠেলে দিতে পারে দেয়ালে পিঠ ঠেকার মতো অবস্থায়। যদি এখনই নিয়ন্ত্রণ না করা যায়, ভবিষ্যতে করার মতো আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না।

অর্থনৈতিকভাবে আমরা দুর্বল হয়ে পড়ছি কেন
• আয় স্থির, ব্যয় অনিয়ন্ত্রিত: নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে। কিন্তু আয় প্রায় একই জায়গায় থেমে আছে। এতে সঞ্চয় নয়, বরং ঋণই বাড়ছে।
• একক আয়ের ওপর নির্ভরতা: পরিবারে একজন আয় করে আর সবাই ব্যয়ের অংশীদার। একার আয় দিয়ে সব সামলানো কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
• বিনোদনের নামে বেদনাদায়ক খরচ: রেস্তোরাঁ, পার্ক, ফাস্ট ফুড—এসব বিনোদন এখন খরচের বড় উৎস। নিজে রান্না না করে প্রতিনিয়ত বাইরে খাওয়া। খেয়ে খেয়ে অসুস্থ হয়ে যাওয়া, পরে একসময় হাসপাতালে যেতে হয়। চিকিৎসা খরচের কথা তো ভাবতেই ভয় লাগে। বাইরে খেয়ে লস কেবল একদিকে নয়, দুদিকেই।

• অযাচিত মনোরঞ্জন থেকে মনের অসুখ: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তারকাদের জীবন দেখে অনেকেই অন্ধ অনুকরণে ব্যস্ত। ফ্যাশনের পেছনে অযথা টাকা খরচ হয়। অথচ নিজের স্বকীয় স্টাইলেই আমরা হয়ে উঠতে পারি আত্মবিশ্বাসী। ছয় হাজার টাকার জমকালো পোশাকের চেয়ে ৬০০ টাকার পোশাকেও নিজেকে পরিপাটি রাখা যায়।
• দীর্ঘ পরিকল্পনার অভাব: মানুষ সাধারণত বিনিয়োগে ভয় পায়। ধৈর্য না রাখার কারণে তিন বছরের পরিকল্পনার ব্যবসা তিন মাসেই বন্ধ হয়ে যায়। ফলে উৎসাহ হারিয়ে হতাশা বাড়ে।

আয়-ব্যয়ের ভারসাম্যহীনতা ঠিক রাখতে করণীয়
• উপার্জন শুরু করুন আজই: সময় নষ্ট না করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব উপার্জনে যুক্ত হওয়া। বড় চাকরি নয়, ছোট আয় দিয়েও অভিজ্ঞতা বাড়ে। সময়ের অপচয় নয়, কাজের শুরু দরকার।
• কর্মে মনোযোগ ও যত্ন: কাজকে আপন করলে কাজ কোনো দিন পর করে না। অর্থাৎ আপনি যত দ্রুত কাজের সঙ্গে মিশে যাবেন, সততার সঙ্গে কাজ করবেন, তত দ্রুতই অবিশ্বাস্য আশানুরূপ ফল পাবেন।

আরও পড়ুন

• অন্যকে নয়, নিজের জীবনকে অনুসরণ করুন: অন্যরা কী করল, তাতে কিছু যায়-আসে না। নিজের সীমাবদ্ধতাকে সম্মান করেই এগিয়ে যেতে হবে।
• সঞ্চয় করুন, ব্যাংকে হোক বা মাটির ব্যাংকে: টাকা নেই মানেই আপনি ব্যর্থ, এমন চিন্তা সমাজে বিদ্যমান। তাই সামান্য হলেও সঞ্চয় শুরু করুন। জমানো টাকায় নিজের স্বপ্ন পূরণ করুন, ভালো থাকুন।
• ধার দেওয়া কিংবা নেওয়া: বন্ধুত্ব কিংবা আত্মীয়তার খাতিরে টাকার লেনদেনের পরিণতি প্রায়ই তিক্ত হয়। তাই পাত্রভেদে সাবধান হোন। টাকা নেওয়ার সময় খুব খাতির জমালে ফিরে পাওয়ার বেলায় নিখোঁজ।
• একাধিক আয়ের পথ তৈরি করুন: একটাই আয়ের উৎস খুব ঝুঁকিপূর্ণ। চাকরির পাশাপাশি অনলাইন, ফ্রিল্যান্সিং, সেবা বা পণ্য বিক্রির মাধ্যমে বিকল্প আয় খুঁজে বের করা।

টাকায়ই হয় আশা কিংবা হতাশা, সফলতা কিংবা ব্যর্থতা। তাই এখন থেকেই চাই অর্থনৈতিক সচেতনতা। আয়-ব্যয়ের সুসমতা না থাকলে, আজ হোক বা কাল, পিঠ একদিন দেয়ালে ঠেকবেই।

লেখক: সহকারী প্রধান শিক্ষক, ব্লু-বার্ড স্কুল, ভৈরব