হাসি খেয়েছে কি

আমাদের বেড়ে ওঠায় বাবাদের অবদান অনেক। তাঁরা সেই অবদানের কথা প্রকাশ করতে চান না। সব সময় সন্তানের ছায়া হয়ে আড়ালে থাকতে পছন্দ করেন। সন্তান হিসেবে আমরাও বাবাদের কৃতজ্ঞতা জানাতে ভুলে যাই। ১৫ জুন ছিল বাবা দিবস। এ উপলক্ষে বাবাকে না বলা কথা লিখে পাঠিয়েছেন বন্ধুসভার বন্ধু ও পাঠকেরা।

অলংকরণ: এস এম রাকিবুুর রহমান

মা বেড়াতে যাওয়ায় প্রথমবার যখন বাবাকে রান্না করে খাওয়াই, তখন তাঁর অবাক হয়ে যাওয়া মুখটা দেখে ভীষণ আনন্দ পেয়েছিলাম। তিনি চারদিকে মেয়ের রান্নার প্রশংসা করে বেড়িয়েছিলেন।

একটা ঘটনা খুব মনে পড়ে। তখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি। তখনো ফ্রক পরি, যদিও বান্ধবীদের মধ্যে অনেকেই থ্রি-পিস পরা শুরু করেছে। একদিন একটি দোকানে সুন্দর সাদা একটা থ্রি-পিস পছন্দ হয়ে গেল। রাতে মাকে বললাম কিনে দিতে।

মা বাবাকে বললেন। বাবা অনেক রাগ দেখালেন। আমি তখন পাশের রুমেই। সবকিছু শুনতে পেলাম। বাবার ওপর রাগ করে সারা দিন না খেয়েই কাটালাম। তিনি একটু পর পর আসছিলেন আর মাকে জিজ্ঞেস করছিলেন, ‘হাসি খেয়েছে কি?’ ‘না খায়নি’—প্রতিবার মায়ের একই উত্তর শুনে বাবা খুব চিন্তায় পড়ে গেলেন। সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজ পড়ে এসে মাকে টাকা দিয়ে বলেছিলেন, ‘যাও, হাসিকে জামাটা কিনে দাও, আর ওকে হোটেল থেকে পেট ভরে মিষ্টি খাইয়ে নিয়ে এসো।’

আমি তো মহাখুশি। বাবার কাছে এটা ছিল আমার প্রথম ও শেষ বায়না। আর কখনোই কোনো কিছুর জন্য না খেয়ে থাকতে হয়নি।

হাসি-কান্নার অনেক প্রহর বিদায় নিয়ে শেষের কিছু দিন বাবার সঙ্গে থাকার সৌভাগ্য হয়েছিল। একবার সুযোগও পেয়েছি ছোট্ট বাচ্চার মতো গোসল করিয়ে দেওয়ার। তারপর থেকে বাবাকে আর কাছে পাইনি। শেষবার দেখেছিলাম দিনাজপুরের একটা হাসপাতালে। বাবা আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে। চোখ দুটো খোলা। চোখের জল গড়িয়ে পড়ছে।

তাঁর এই ছবি চোখে ভাসে বারবার। যেখানেই থাকো, ভালো থেকো বাবা। তোমাকে অনেক বেশি মিস করি।

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ঠাকুরগাঁও বন্ধুসভা