তাঁরাও তো মানুষ

ছবি: এআই/বন্ধুসভা

হাসপাতালের করিডরের বাতাস যেন প্রতিদিনই এক নতুন গল্প বয়ে আনে—একজন রোগীর আর্তনাদ, এক মায়ের উৎকণ্ঠা, এক বৃদ্ধের নির্বাক চাহনি, কিংবা এক সদ্য প্রসূতার নিঃশব্দ সান্ত্বনা। এসব গল্পের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকেন কিছু মানুষ—ফিজিশিয়ান, নার্স, ফিজিওথেরাপিস্ট, ল্যাব অ্যাটেনডেন্ট—তাঁরা সবাই যেন হয়ে ওঠেন জীবনের অনিবার্য অংশ।

আমরা যখন হাসপাতালে যাই, আমাদের চোখে একরাশ প্রত্যাশা। চাই—ডাক্তার মনোযোগ দেবেন, নার্স হবেন কোমল, থেরাপিস্ট বুঝবেন আমার ব্যথার মানে। আমরা চাই—আমার পরিচয়, আমার কষ্ট, আমার ভেতরের আর্তি তাঁদের কাছে বিশেষ হয়ে উঠুক।

তবে আমরা কি একবারও ভাবি—এই মানুষগুলোর জীবন কেমন? একজন নার্স প্রতিদিন হয়তো এক শ মানুষের ক্ষত বদলান, কারও প্রসব বেদনায় পাশে দাঁড়ান, আবার কেউ প্রিয়জন হারালে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে নিজেই ভেঙে পড়েন। একজন চিকিৎসক হয়তো টানা অপারেশনের পর ক্লান্ত চোখে আবারও শুনছেন কারও হৃদয়ের শব্দ। একজন ফিজিওথেরাপিস্ট দিনের পর দিন রোগীর ব্যথার শরীর স্পর্শ করেন, অথচ নিজের শরীরটাই হয়তো কাঁপছে ক্লান্তিতে।

তাঁরা কেউ যন্ত্র নন। তাঁদেরও পরিবার আছে, ভালোবাসার মানুষ আছে, নিজের ভেতর অভিমান জমে থাকা দিনও আছে। তারপরও তাঁরা দাঁড়িয়ে থাকেন—আমাদের পাশে। তাঁদের সকাল শুরু হয় মানুষের কান্না দিয়ে, রাত ফুরায় হয়তো হাসপাতালের আলো ঝলসানো শূন্যতা দেখে। অথচ একটু দেরি হলেই আমরা ধৈর্য হারাই। গলার স্বর একটু কড়া হলেই বলি—‘ব্যবহার খারাপ!’ চিকিৎসা বিলম্বিত হলে ভাবি—‘আমি গুরুত্ব পাচ্ছি না!’

আমরা ভুলে যাই—তাঁদেরও হয়তো কষ্ট আছে। হয়তো তাঁর সন্তানের জ্বর, হয়তো আজ তাঁর নিজের শরীরটাই চলতে চায় না, হয়তো তিনি শোকাহত—তবু দাঁড়িয়ে আছেন আমাদের দিকে তাকিয়ে।

মানবিকতা একতরফা দাবি নয়। যত্ন পেতে হলে যত্ন দিতে হয়, সেবা পেতে হলে শ্রদ্ধা দিতে হয়। একটি বিনীত ধৈর্য, একটি কোমল হাসি, একটি আন্তরিক ধন্যবাদ—এই ছোট ছোট বিষয়ই একজন সেবাকর্মীর হৃদয়ে গভীর রেখা টেনে দেয়। তাঁরা আমাদের জীবন ফেরাতে শিখিয়েছেন।

চলুন, আমরা তাঁদের জীবনেও একটু সহানুভূতির আলো জ্বালাই।

শিক্ষার্থী, ফিজিওথেরাপি বিভাগ, মেডিসিন অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।