কালনীর জলে নৌকায় ভেসে বেড়ানো এক চাঁদনি রাত

নৌকায় সব বাল্যকালের বন্ধু
ছবি: লেখক

স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে এসেছি বহু আগেই। ইচ্ছা থাকলেও এখন আর আগের মতো করে বন্ধুদের সঙ্গে নিয়মিত আড্ডা, গল্প, গান–বাজনা কিছুই করার সুযোগ হয়ে ওঠে না। একসময় সবাই একই গ্রামে থাকলেও এখন একেকজন দেশের একেক প্রান্তে থাকা হয়। সবাই নিজেদের জীবন নিয়ে প্রচণ্ড ব্যস্ত। শত ব্যস্ততার মধ্যেও যখনই ছুটি পাই, চেষ্টা করি গ্রামের বাড়িতে সবাই মিলিত হয়ে একসঙ্গে সময় কাটানোর। কিন্তু নানা কারণে সেটি সম্ভব হয়ে ওঠে না।

সৌভাগ্যক্রমে এই ঈদে আমাদের দূরত্বের কষ্টের কিছুটা পরিত্রাণ ঘটেছে। সব বন্ধু বাড়িতে না গেলেও বড় একটা অংশ এবার বাড়িতে যাই। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী একটা নৌকা ঠিক করে সারা রাত নৌকাবিলাস করেছি।

কালনীর বুকে লেখকদের নৌকা
ছবি: লেখক

ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত ঠিক ১০টা বেজে ২০ মিনিট। ছোট ভাই সোহেল তার নৌকা নিয়ে ঘাটে আসে। আমরা চুলা থেকে শুরু করে রান্নার সব উপকরণ পাশাপাশি রাত যাপনের জন্য অন্যান্য সরঞ্জামাদি নিয়ে নৌকায় উঠি এবং মঙ্গল উলুধ্বনি দিয়ে কালনীর বুকে নৌকা ভাসাই।

নৌকা কিছুদূর এগোতেই আমাদের বন্ধু পল্লিচিকিৎসক অংকন গান ধরল, ‘আসমানে যাইও নারে বন্ধু, ধরতে পারব না—তোমায়; পাতালে যাইও নারে বন্ধু, ছুঁইতে পারব না...’। একেক করে গলা মেলাল বন্ধু চয়ন, রাহুল, নিক্সন, তমাল, যুগল, সুমন, সন্দিপন ও আমি।

এরই মধ্যে নৌকা এসে থামল প্রতাপপুর–বিষ্ণুপুরের মাঝামাঝি একটি বিস্তীর্ণ চরে। সবাই খাওয়াদাওয়া সেরে আড্ডায় বসলাম। শুরু হলো একেক করে প্রত্যেকের কৈশোরের স্মৃতিচারণা; মাথার ওপর তখন মায়াবী চাঁদ কিরণ দিয়ে যাচ্ছে।

মায়াবী চাঁদ
ছবি: লেখক

নৌকায় সব বাল্যকালের বন্ধু, কৈশোরের স্মৃতিচারণা, গল্প, আড্ডা, মায়াবী চাঁদনি রাত ও কণ্ঠে আবদুল করিম, হাসন রাজা, শীতালং ফকির, পাগল হাসান ও রবিঠাকুরের ‘পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়, ও... মোরা সুখের দুখের কথা কব, প্রাণ জুড়াবে তায়।’–এর মতো নস্টালজিয়া হওয়ার মতো গান। সব মিলিয়ে দারুণ এক আনন্দের আয়োজন।

পরদিন সকাল হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু রাতের আনন্দের ঘোর তখনো কাটেনি। সেই ঘোর নিয়েই ঘরে ফেরা। আর ঘোর কাটবেই–বা কী করে; নিয়ম করে হয় না কথা, ব্যস্ত থাকি যে যার কাজে। একসঙ্গে আবার দেখা হলে স্মৃতির শহর নতুন জাগে।

সব মিলিয়ে খুব দারুণ একটা সময় কেটেছে এবারের ঈদের ছুটিতে। আগামী ছুটিতে বন্ধুরা মিলে আবারও কোথাও এভাবেই আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে হারিয়ে যাব দূর অজানায়।

বন্ধু, সিলেট বন্ধুসভা