রূপসা নদী: অপরূপ সুন্দর ও সম্ভাবনাময়
রূপসা নদীর পাশে দাঁড়ানো মানেই মন ভালো হয়ে যাওয়া। একনাগাড়ে কয়েক মিনিট তাকিয়ে থাকলে হঠাৎ শুশুকের উঁকি মারার অপরূপ দৃশ্য মুগ্ধ করে সবাইকে। ঢেউয়ের পরে ঢেউ আছড়ে পড়ে, পড়ন্ত বিকেলের আকাশে সূর্য ডুব দেওয়ার মনোরম দৃশ্য। ছোট ডিঙিনৌকায় ভেসে ছোট মাছ ধরে জীবিকা আহরণ করেন জেলেরা। এর লবণাক্ত পানি চিংড়ি চাষের উপযোগী। ছোট-বড় নৌকায় প্রতিদিন পারাপার করেন সহস্রাধিক মানুষ। সেতুসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার পদবাহিকায় গড়ে উঠেছে ছোট ছোট দোকান, নৌকাভ্রমণ ও খাবারের স্টল।
ভৈরব নদের দক্ষিণাংশ থেকে উৎপন্ন হয়েছে রূপসা নদী। ভৈরব ও রূপসা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে আটরা নদী। তিন নদীর মোহনার পাশেই রয়েছে জেলখানা মাঠ। কিছু দূর এগিয়ে এলেই রূপসা ঘাট ও খানজাহান আলী বা রূপসা সেতু। নদীটি পশুর নদের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। এটি শুধু প্রাকৃতিক জলধারা নয়—এটি খুলনার মানুষের জীবন, অর্থনীতি, ইতিহাস ও সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
খুলনা জেলার রূপসা, দাকোপ, বটিয়াঘাটা ও বাগেরহাট জেলার মোংলা উপজেলার মধ্য দিয়ে বঙ্গোপসাগরের দিকে বয়ে চলেছে। এই নদীর পাড়ে রয়েছে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের সমাধি; রয়েছে বিদেশে রপ্তানিযোগ্য মৎস্য (চিংড়ি) ঘর, শহর, গ্রাম, মাছের ঘের, শুঁটকিপল্লি, রূপসা রিভার পার্ক ও সেভেন রিংস সিমেন্ট ফ্যাক্টরি, র্যাব-৬ এর ক্যান্টনমেন্ট এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বসতি ও শিল্পকারখানা।
আগে বাংলাদেশের শিল্পনগরী বললেই মনে ভেসে উঠত খুলনার কথা। এর গড়ে ওঠার অন্তরায় ছিল রূপসা নদী। ২০০৫ সালে নদীর ওপর দিয়ে খানজাহান আলী সেতু নির্মাণের মাধ্যমে এই নদীর সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধি পায়। দূর থেকে সেতুটিকে মনে হয় অপরূপ সুন্দর কোনো অলৌকিক দৃশ্য—রাতের বেলায় আলোর ঝলকানি। বর্তমানে রেলসেতু নির্মাণের পর আরও সুন্দর হয়েছে নদীটি।
নদীপথে মালবাহী যান চলাচলের মাধ্যমে দেশের দক্ষিণাঞ্চল আরও সমৃদ্ধিশালী হয়েছে। রূপসা সেতু ও রেলসেতুর মাধ্যমে মোংলা বন্দরের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হয়েছে। নদীতে কুমির, ডলফিনসহ নানান জলজ প্রাণী পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
বাংলাদেশের অপরূপ সৌন্দর্য ও সম্ভাবনাময় এই নদীর প্রেমে পড়েছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জীবনানন্দ দাশসহ বহু কবি, ঔপন্যাসিক, গবেষক ও কলামিস্ট।
বর্তমানে নদীটি নানান সমস্যায় জর্জরিত; শিল্পের বর্জ্য, নদীর পাড় অবৈধভাবে দখল, অবৈধ মাছ আহরণ এবং লবণাক্ততা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।
সাংগঠনিক সম্পাদক, খুলনা বন্ধুসভা