বাবা ছিলেন ডাক বিভাগের কর্মকর্তা। তাই ছোটবেলা থেকেই আমার জীবনে চিঠির প্রতি একটা আলাদা আবেগ ছিল। তখন মোবাইল ছিল না, ইন্টারনেট ছিল না। মানুষ অপেক্ষা করত কাগজে লেখা কিছু অক্ষরের জন্য, ডাকপিয়নের সাইকেলের ঘণ্টির শব্দের জন্য।
মনে আছে—ডাকপিয়ন দূর থেকে এলে বুক ধড়ফড় করত, ‘আজ কি আমার নামে কিছু আছে?’ সেই হলুদ খামের ভাঁজে, কালি মাখা অক্ষরে, অচেনা হাতের লেখার মধ্যেই যেন লুকিয়ে থাকত পুরো একটা পৃথিবী। নতুন চিঠির গন্ধ, কাগজের মসৃণ স্পর্শ, আর শব্দে মিশে থাকা ভালোবাসা—সব মিলিয়ে সেটাই ছিল এক অমূল্য ধন।
নিজেও চিঠি জমাতাম। বন্ধুদের লিখতাম, আত্মীয়দের লিখতাম, এমনকি কোনো কারণ ছাড়াই শুধু অনুভূতি লিখে রাখতাম কাগজে। মনে হতো, কাগজও যেন গোপন কথা শুনছে। এখনো চোখ বন্ধ করলে দেখতে পাই, সেই কালিভেজা অক্ষর, শব্দের ভেতর জমে থাকা উষ্ণতা।
আজ যখন ভেবে দেখি—আমরা এখন মুহূর্তেই মেসেজ পাঠাই, ভিডিও কলে কথা বলি, এক সেকেন্ডে ছবি শেয়ার করি। কিন্তু একটা চিঠির জন্য অপেক্ষা করার যে আনন্দ, খাম খুলে পড়ার যে কাঁপা হাত, আর লেখা শব্দে পাওয়া যে হৃদয়ের স্পর্শ—তার বিকল্প আজও কিছু হয়নি।
আজ চিঠি দিবসে মনে হচ্ছে, আবার কাগজ-কলম হাতে নিই। হয়তো লিখে ফেলি কোনো প্রিয়জনের উদ্দেশে কিছু কথা—যা হয়তো বলা হয়নি, হয়তো বলা সম্ভবই নয়।
চিঠি আসলে শুধু যোগাযোগ নয়—
চিঠি মানে স্মৃতি,
চিঠি মানে হৃদয়ের ঠিকানা,
চিঠি মানে এক টুকরো ইতিহাস।
চিঠি নিয়ে আজ মনে পড়ছে বাবার কথা, খালাতো ভাই মো. শিমরোজের কথা, বন্ধু মমিনুল ইসলামসহ আরও অনেকের কথাই।
সহসভাপতি, বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদ