এমন আয়োজন বারবার ফিরে আসুক

গভীর রাতে জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও অন্য সদস্যদের তাঁবুতে তাঁবুতে গিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়াটা ছিল অনুপ্রেরণাদায়কছবি: লেখকের সৌজন্যে

প্রথম আলো বন্ধুসভার ষষ্ঠ জাতীয় বন্ধু সমাবেশ ২০২৫ অনুষ্ঠিত হয় গাজীপুরের জাতীয় স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, মৌচাকে। নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে দীর্ঘ পাঁচ বছর পর সমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ায় এর গুরুত্ব ও আবেগ ছিল আরও গভীর। দুই বছর পরপর অনুষ্ঠিত হলেও এবারের সমাবেশ যেন অপেক্ষার সব আনন্দ একসঙ্গে ফিরিয়ে এনেছে।

জাতীয় বন্ধু সমাবেশ ষষ্ঠবারের মতো আয়োজিত হলেও, আমি প্রথমবার এ আয়োজনে অংশগ্রহণ করতে পেরে ভীষণ উচ্ছ্বসিত ও আনন্দিত। এমন একটি বৃহৎ, সুশৃঙ্খল ও হৃদয়ছোঁয়া আয়োজনের জন্য প্রথম আলো ও বন্ধুসভার জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।

তিন দিনের এই আয়োজনের প্রতিটি মুহূর্ত ছিল রঙিন ও প্রাণবন্ত। দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা বন্ধুসভার সদস্যদের একত্র করার এই প্রয়াস সত্যিই প্রশংসনীয়। উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান। তাঁর বক্তব্যে বন্ধুসভার দর্শন, লক্ষ্য ও বাংলাদেশের প্রতি ভালোবাসার প্রতিফলন স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে। এমন একটি আয়োজনে থাকতে পেরে নিজেকে সত্যিই ধন্য মনে হয়েছে।

সমাবেশের প্রতিটি মুহূর্ত ছিল রঙিন ও প্রাণবন্ত।

এই বন্ধু সমাবেশ যেন ছিল পুরো বাংলাদেশের এক ক্ষুদ্র সংস্করণ। দেশের বিভিন্ন জেলা ও অঞ্চল থেকে আগত বন্ধুরা নিজেদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, বিখ্যাত খাবার ও দর্শনীয় স্থানগুলো সবার সামনে উপস্থাপন করেছেন দারুণ আন্তরিকতায়। একে অপরের সঙ্গে পরিচয়, গল্প, হাসি আর সহযোগিতার মধ্য দিয়ে তৈরি হয়েছে এক অনন্য বন্ধন। সবার একটাই প্রত্যয়—বাংলাদেশকে একটি সুন্দর, শান্তিপূর্ণ ও মানবিক দেশ হিসেবে গড়ে তোলা।

শীতের রাতে তাঁবুতে মিলেমিশে থাকা, তাঁবুর পাশে বাঁশ ও কাঠ জোগাড় করে আগুন জ্বালিয়ে চারপাশে বসে আড্ডা, গান, নাচ আর প্রাণখোলা হাসি—সবকিছু মিলিয়ে এটি ছিল এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। অপরিচিত মানুষগুলো খুব অল্প সময়েই হয়ে উঠেছিল আপন। আগুনের উষ্ণতায়, গানের তালে তালে শরীর ঝাঁকিয়ে শীতের রাত উপভোগ করার স্মৃতি আজীবন মনে গেঁথে থাকবে।

প্রথম দিন সন্ধ্যার কিছু আগে পৌঁছে উপহার সংগ্রহ, প্রস্তুতি শেষে সবাই মিলে মঞ্চের সামনে উপস্থিত হয়ে দিনের কার্যক্রম সম্পর্কে জানা, রাতের খাবারের পর তাঁবুর বাইরে আড্ডা—সবকিছুই ছিল আনন্দে ভরা। তাঁবুর ভেতরে থাকব কেন, আমরা তো আনন্দ করতে এসেছি। এই ভাবনাতেই রাতভর চলেছে গান, হাসি আর নাচ।

এবার ফিরতে হবে নিজ নিজ কর্মব্যস্ত জীবনে।

পরদিন সকালে মূল আয়োজনের উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে সমাবেশ আরও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। অতিথিদের উপস্থিতি আয়োজনের গুরুত্ব বাড়িয়ে দেয়। দেয়ালিকা প্রদর্শনী ও সেখান থেকে সেরা দশকে পুরস্কার প্রদান ছিল প্রশংসনীয় উদ্যোগ। দুপুরের পর বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পুরস্কার বিতরণ ও সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান—সব মিলিয়ে আয়োজন ছিল সুপরিকল্পিত ও উপভোগ্য।

দ্বিতীয় রাতেও তাঁবুর সামনে আগুন জ্বালিয়ে চলে বন্ধুদের উদ্‌যাপন। গভীর রাতে জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও অন্য সদস্যদের তাঁবুতে তাঁবুতে গিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়াটা ছিল অনুপ্রেরণাদায়ক। এতে বন্ধুসভার সদস্যদের মধ্যে বন্ধন আরও দৃঢ় হয়েছে।

বন্ধু সমাবেশ যেন ছিল পুরো বাংলাদেশের এক ক্ষুদ্র সংস্করণ।

শেষ দিনে সকালের নাশতা শেষে সবাইকে ফিরতে হয়েছে নিজ নিজ কর্মব্যস্ত জীবনে। কিন্তু সঙ্গে করে নিয়ে গেছি অসংখ্য স্মৃতি, নতুন পরিচয় আর হৃদয়ভরা ভালোবাসা।

দুই রাত ও এক দিনের এই বন্ধু সমাবেশে থাকতে পেরে নিজেকে সত্যিই সৌভাগ্যবান মনে করছি। তাঁবুতে কাটানো রাত, আগুনের চারপাশে অপরিচিত মানুষদের সঙ্গে শীত উপভোগ করা—এ অভিজ্ঞতা জীবনের অন্যতম সুন্দর অধ্যায় হয়ে থাকবে। ভবিষ্যতেও এমন আয়োজন বারবার ফিরে আসুক, এই প্রত্যাশায়।

বন্ধু, দিনাজপুর বন্ধুসভা