বৃক্ষরোপণ যখন মানসিক প্রশান্তির উৎস
একবার সিলেট শহরের এক ব্যস্ততম মোড়ে একটি কাঠবাদামগাছ রোপণ করি। সেদিন বিকেলে, গাড়ির হর্ন আর মানুষের চিৎকারের ভিড়ে যখন আমি মাটি খুঁড়ে গাছটা বসাচ্ছিলাম, মনে হচ্ছিল যেন একটা নিশ্বাস ফেলার জায়গা পেয়েছি। পুরো প্রক্রিয়াটাই যেন ধ্যানের মতো। আজ সেই গাছের নিচে যখন পথচারী বসে আড্ডা দেয়, দেখে মনে আত্মতৃপ্তি পাওয়া যায়। মনে হয় জীবনে ধন-সম্পদ বলতে এটাই আমার।
বৃক্ষরোপণ শুধু পরিবেশের জন্য উপকারী নয়, এটি ব্যক্তিগত মানসিক প্রশান্তির এক দুর্দান্ত উৎস। নিজের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, গাছ লাগানোর সময় ও পরে যে মানসিক তৃপ্তি মেলে, তা সত্যিই অনন্য। যখনই গাছের ফুল অথবা ফল হয়, মনে হয় নিজের সন্তানের মুখের প্রথম কথা শুনছি। শিশুদের হাসিমুখ ভেসে ওঠে চোখের কোণে।
করোনাকালে যখন চারদিকেই উদ্বেগ আর আতঙ্ক, তখন শহরে রাধাচূড়া গাছের কিছু চারা রোপণ করি। আজ সেগুলো ফুলে ফুলে রঙিন হয়ে কথা বলে আমার সঙ্গে। প্রতিদিন সকালে গাছে পানি দেওয়া, নতুন কুঁড়ি দেখা—এসব ছোট ছোট জিনিস মানসিক শান্তি ধরে রাখতে সাহায্য করে। শত কথার আঘাতেও সাহস হারাইনি, বরং গাছের শীতল বাতাস আমায় সাহস তৈরি করতে শিখিয়েছে।
একবার বৃষ্টিমুখর এক রাতে রাস্তায় একটি নিমগাছ ভেঙে পড়তে দেখি। পরদিন সকালে গিয়ে সেটাকে আবার তুলে দাঁড় করিয়ে দিই, খুঁটি বেঁধে দিই। কাজটা করতে গিয়ে ভিজে গেলাম, ঠান্ডা লাগল। কিন্তু মনে ছিল একধরনের শান্তি—যেন কোনো জীবন্ত কিছুকে সাহায্য করলাম।
সিলেটের নতুন কারাগার যখন হয়, তখন গাছ রোপণের অনেক জায়গা দেখে একদিন রনি আর বিভাষ দা’কে সঙ্গে করে গাছ রোপণ করতে যাই। এখন সেই গাছগুলোর শীতল ছায়ায় যখন আসামিদের আত্মীয়স্বজনকে বসে থাকতে দেখি, মনে হয় আমার চেষ্টা সত্যি আল্লাহ কবুল করেছেন। পথিকের আশ্রয় ছায়া তৈরি করতে পেরেছি। বৃক্ষের ভালোবাসায় বাঁচুক পৃথিবী।
বৃক্ষরোপণ হলো ‘গিভ অ্যান্ড গ্রোথ’ অনুভব। আপনি গাছকে একটু যত্ন দেন, আর সেটা আপনাকে দেবে প্রশান্তি, ভালোবাসা আর মানসিক স্বস্তি। তাৎক্ষণিক ফল না পেলেও, একটা দীর্ঘস্থায়ী ভালো লাগা থেকে যায়। জীবনে চলার পথে বহু কিছু হারিয়ে যাবে, কিন্তু গাছের ছায়া হারিয়ে যায় না। প্রচণ্ড গরমেও গাছ রোপণ করতে গিয়ে ঘামে শরীর ভিজেছে, কিন্তু মনের গহিন কোণে মেঘ–শীতল অনুভব জুগিয়েছে।
বন্ধু, সিলেট বন্ধুসভা