এখানে এসে আবার পেয়ে গেলাম অষ্টম আশ্চর্য। এ কদিন শুধু দূর থেকে বরফে ঢাকা পাহাড় দেখেছি। বারবার মনে হয়েছে, যদি কোনো দিন ওই পাহাড়ে উঠতে পারতাম। দেশের টেলিভিশনে একটা বিজ্ঞাপনে দেখা যায়, একজন পাহাড়ে উঠতে যাচ্ছে আরেকজন এসে বলছে যে এটা সম্ভব নয়। আবার আরেকজন এসে বলেছে, ‘সম্ভব। কেউ পারেনি তো কী হয়েছে? আপনি পারবেন।’ সত্যি সত্যি সে পেরেছিল। আমরা সেই বিজ্ঞাপনের প্রথম অংশকে বিশ্বাস করেছিলাম। এবার আমরা সত্যি সত্যি এমন একটা বরফের পাহাড় পেয়ে গেলাম, যে পাহাড়ে ওঠা যায়। সবাই ক্লান্ত ছিলাম, তারপরও অনেক ঝুঁকি নিয়ে বরফের পাহাড়ে উঠলাম। জীবনে আর কোনো অপূর্ণতা রইল না।
রোপওয়ে
এখানে রুপি দিয়ে রোপওয়েতে ওঠা যায়, স্কেটিং করা যায়। রোপওয়ের স্থানীয় নাম ‘গন্ডোলা’। এটা নাকি বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু কেব্ল কারের একটি। অনেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কেব্ল কার বলেন। আমাদের অবশ্য রোপওয়েতে ওঠা হয়নি। এর টিকিটের দাম বেশি। তারপরও পাওয়া যায় না। কয়েক দিন আগে টিকিট করতে হয়। আমরা রোপওয়ের খুব কাছে ছিলাম। এসব বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে। যদি ওঠার কোনো সুযোগ থাকে।
এখানে কংডুরি নামে একটি পর্বত আছে। রোপওয়েতে এক ঘণ্টায় সেখানে যাওয়া যায়। সেখান থেকে গুলমার্গের পুরো দৃশ্য দেখা যায়। পর্যটকদের কাছে এটি নাকি অত্যন্ত আকর্ষণীয়। শুনেছি, এখানে আফারাওয়াত শিখর নামে একটি জায়গা আছে। এটি নাকি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৩ হাজার ফুটের বেশি উচ্চতায়। জায়গাটি গুলমার্গের এত সৌন্দর্যের ভেতর আরও বেশি সুন্দর। এখানে প্রায় সব সময় তুষারপাত হয়। এর শিখর থেকে উপত্যকার আরও নান্দনিক দৃশ্য দেখা যায়। এর মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরেই আবার পাকিস্তান সীমান্ত। গুলমার্গের আরেকটি রূপকথার মতো জায়গা হলো খিলনমার্গ। কারও যদি এই গ্রহের সুন্দর কোনো জায়গায় যেতে ইচ্ছা করে, তাহলে খিলনমার্গ নাকি হতে পারে সেই জায়গা। এখানে এসে মনে হবে, সৃষ্টিকর্তা যেন নিজ হাতে সবকিছু সাজিয়ে রেখেছেন।
তুষারপাত
এখানে আসার সবচেয়ে ভালো সময় হলো মার্চ থেকে নভেম্বর। তবে এপ্রিল-মেতে এখানকার প্রকৃতি বেশি সুন্দর হয়। কিন্তু যাঁরা তুষারপাত দেখতে চান, তাঁদের যেতে হবে ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে। আবার এ সময়ের মধ্যে এলেই যে তুষারপাত দেখা যাবে, সেটাও নিশ্চিত নয়। এই সময়ের মধ্যে গিয়েও এই লেখক তুষারপাত দেখতে পাননি। আপনি হয়তো বড়জোর পাঁচ থেকে সাত দিন থাকবেন। সে সময়ের মধ্যে তুষারপাত না–ও হতে পারে। কিন্তু এটা নিশ্চিত যে শুভ্র বরফের চাদরে ঢাকা থাকবে বিশাল এলাকা। তবে যাঁরা কঠিন ঠান্ডা পছন্দ করেন, তাঁদের কাছে ডিসেম্বর-জানুয়ারি হবে সবচেয়ে প্রিয় সময়। মোগল ও ব্রিটিশ শাসকদের অবকাশের প্রিয় জায়গা ছিল গুলমার্গ।
চলবে...