কাপ্তাই লেকের একটুকরা স্মৃতি

কাপ্তাই লেকে লেখক।

লেকের জলে ভাসতে ভাসতে সাহিত্য আলোচনা। সে এক অভূতপূর্ব সুখানুভূতি। আমি যদি একজন কথাসাহিত্যিক হতাম কিংবা কবি, তাহলে হয়তো গদ্য বা পদ্যের ছন্দে ভাবাবেগ তুলে ধরতে পারতাম। কিন্তু আমি তো নেহায়েত একজন শিক্ষানবিশ। অনুভূতি আছে, তবে তা প্রকাশের ভাষা নেই। তবু দু–চার কথা বলার লোভ সামলানো দায়।

১২ ও ১৩ নভেম্বর রাঙামাটির কাপ্তাই লেকে হাউসবোটে ভেসে দুজন গুণী মানুষের সাহিত্য আলোচনা শুনে প্রাণটা জুড়িয়ে গেল। বাংলা একাডেমি আয়োজিত তরুণ লেখক কর্মশালার একজন অংশগ্রহণকারী হিসেবে এই মহাসুযোগের অংশীদার হতে পেরে আমি গর্বিত।

বাংলা ও চাকমা উভয় ভাষায় পারদর্শী দুজন সাহিত্যবোদ্ধা সঙ্গে।

বাংলা ও চাকমা উভয় ভাষায় পারদর্শী দুজন সাহিত্যবোদ্ধা, যাঁদের একজন বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত (নাটক), তাঁদের সাহিত্যচর্চার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোকপাত করলেন। তাঁদের লেখক হয়ে ওঠার গল্প, প্রাপ্তি–অপ্রাপ্তি, পাহাড়ি-বাঙালি সম্প্রীতি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে দিনভর আলোচনা চলল।

একজন বাস্তুহারা মানুষের থিতু হওয়া, সাহিত্যপ্রীতি, লেখক হওয়া সর্বোপরি বাংলা একাডেমি পুরস্কার পাওয়া নিয়ে প্রথম দিন প্রাণবন্ত আলোচনা করেন মৃত্তিকা চাকমা। একনিষ্ঠ স্রোতা হয়ে তাঁর সেই বিজয়গাথা মন দিয়ে শুনলাম। বিভিন্ন রকম প্রশ্ন করে মনের কৌতূহল মেটালাম।

বিমপ চাকমা বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের একজন সদস্য। দ্বিতীয় দিন তিনি তাঁর লেখক হয়ে ওঠার গল্প শোনালেন। তিনি বললেন, কবিতা লিখতে লিখতে কীভাবে গল্প লেখার দিকে ঝুঁকে পড়লেন। গল্প থেকে উপন্যাসে। এ যেন সোনার খনিতে ঢুকে মুক্তার দিকে হাত বাড়ানো। তিনি চাকমা ভাষার নানা সীমাবদ্ধতা নিয়েও কথা বললেন।

কাপ্তাই লেকে।

দুজন গুণী মানুষের গল্প শুনতে শুনতে দুটি দিন কীভাবে কেটে গেল, টেরই পেলাম না। আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে শুভলং ঝরনা, রাজবন বৌদ্ধবিহার, কাপ্তাই জলবিদ্যুৎকেন্দ্র, ধর্মগুরু বনভান্তের স্মৃতিমন্দির ও তাঁর মমি, ঝুলন্ত সেতুও দেখা হয়ে গেল।

লেকের স্বচ্ছ পানিতে সাঁতার কাটা কিংবা পাহাড়ের গা বেয়ে ওপরে ওঠা—কোনোটাই বাদ পড়েনি।

কাপ্তাই লেকে হাউসবোটে দুই দিন ভেসে থাকা, সাহিত্য আলোচনায় অংশগ্রহণ, লেক ও পাহাড়ের সৌন্দর্য অবলোকন হৃদয়ে দাগ কেটেছে দারুণভাবে। লেকের নীল জল পাহাড়ের সঙ্গে যেমন মিতালি করেছে, আমিও তেমনি মিতালি গড়ে তুললাম সাহিত্যের সঙ্গে। এই মিতালি যেন অক্ষয় থাকে।