বড়বেলার ঈদ আনন্দ

বয়স বাড়ার সঙ্গে ঈদের আনন্দ পাল্লা দিয়ে বাড়ছে না, বরং কমছে। বর্তমান বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে যখন পেছন ফিরে তাকাই, ফেলে আসা সোনালি দিনগুলোই শুধু মনে পড়ে। দল বেঁধে সালামি সংগ্রহ, বাজি ধরে খেলায় অংশ নেওয়া, ১৫ টাকায় চকবার আইসক্রিম কিনে খাওয়ার মধ্যে যে কী আনন্দ ছিল! ইচ্ছা করে একটা টাইম মেশিনে চড়ে আবার ফিরে যাই সেই দিনগুলোয়।

সারা দিন দুরন্তপনায় মেতে থাকা আমি সময়ের পালাক্রমে কখন যেন ঘরকুনো হয়ে গেলাম, মনে নেই। প্রিয়াংকা জীবনে আসার পর এখন বেশ পরিবর্তন হয়েছে। এখন ঈদ আনন্দটা যেন রেস্টুরেন্টকেন্দ্রিক হয়ে গেছে। পরপর কয়েকটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে ছবি না দিলে যেন ঈদ অপূর্ণ থাকে। সবার মতো একই স্রোতে ঘুরছি, খাচ্ছি, হাসছি আর ভাবছি, দিনগুলো বেশ ভালোই কাটাচ্ছি।

এবার পবিত্র কোরবানি ঈদের লম্বা ছুটি। খুব ইচ্ছা করছিল শ্রীমঙ্গল থেকে ঘুরে আসি। প্রিয়াংকার সম্মতি না পেয়ে মুভি দেখেই সময় কাটছিল, বেশ কয়েকটা বাংলা মুভি আর সিরিজ দেখে ফেলেছি। অবশেষে ঈদের পরদিন প্রিয়াংকার কল্যাণে ঘর থেকে বের হলাম। প্রিয়াংকা, তমা, তানশি—ওরা তিনজন প্ল্যান করেছে সারা দিন রিকশা করে ঘুরবে। মোশাররফ করিমের ‘বোহেমিয়ান ঘোড়া’ সিরিজের শেষ দুটো এপিসোড বাকি থাকায় শেষ পর্যন্ত আমি আর যাইনি। ওরা দিনব্যাপী ঘোরাঘুরি করার পর সন্ধ্যায় প্রিয়াংকার ফোন আসে।

নাফিস, আদিব ও আনাসকে সঙ্গে নিয়ে আমিও বের হলাম। একটা সময় ছিল, যখন নিভৃতে চলাফেরা ভালো লাগত। এখন কাছের মানুষগুলো ছাড়া বিবর্ণ মনে হয়। আমরা ভৈরব শহরের একটি রেস্টুরেন্টে গেলাম। ‘গুহা থেকে আমাকে বের করার জন্য ধন্যবাদ’— প্রিয়াংকাকে উদ্দেশ করে বললাম। ও হাসছে, মেয়েটার হাসি আমার খুবই ভালো লাগে। তানশি অর্ডার দিল মোমোস, মালাই চা, স্পেশাল পোড়া রুটি আর আদিবের জন্য বার্গার। একদিকে গরম, ঈদের ভিড়, অন্যদিকে গরম–গরম মালাই চা আর মোমোস। এ যেন বিষে বিষক্ষয়।

খাওয়ার পর্ব শেষ করে তানশি ও তমা বিদায় নিল। আমি, প্রিয়াংকা, আদিব, নাফিস ও আনাস সিদ্ধান্ত নিলাম বেশ কিছুক্ষণ পায়ে ভ্রমণ করার। বিপণিবিতানগুলো ঈদের ছুটি কাটাচ্ছে। রেস্টুরেন্টগুলোতেই উপচে পড়া ভিড়।
‘গরু না খেয়ে এত মানুষ রেস্টুরেন্টে এল!’ আনাস টিপ্পনী কাটল।

গরমে আরামের বাতাস খেতে ইজি শপিং সেন্টারের দোকান খোলা দেখে ঢুকে পড়লাম। ইজিতে যাব আর কেনাকাটা হবে না, তা কি হয়! আনাস ও নাফিস নিল শার্ট ও টি-শার্ট। কেনাকাটা শেষ করে ইস্পাহানির মাইটি চিপস খেতে খেতে চললাম বাড়ির দিকে।

বন্ধু, ভৈরব বন্ধুসভা