বাবা দিবস
আপনাদের কয় ছেলেমেয়ে
আমাদের বেড়ে ওঠায় বাবাদের অবদান অনেক। তাঁরা সেই অবদানের কথা প্রকাশ করতে চান না। সব সময় সন্তানের ছায়া হয়ে আড়ালে থাকতে পছন্দ করেন। সন্তান হিসেবে আমরাও বাবাদের কৃতজ্ঞতা জানাতে ভুলে যাই। ১৫ জুন ছিল বাবা দিবস। এ উপলক্ষে বাবাকে না বলা কথা লিখে পাঠিয়েছেন বন্ধুসভার বন্ধু ও পাঠকেরা।
দুই বোনের সৌভাগ্য যে আমরা এমন পরিবারে জন্ম নিয়েছি, যেখানে আমাদের সন্তান হিসেবে দেখা হয়েছে, মেয়ে হিসেবে নয়। মা–বাবাকে যখনই কেউ জিজ্ঞেস করেছে, ‘আপনাদের কয় ছেলেমেয়ে?’ বাবা মুক্তিযোদ্ধা ইসহাক খান সব সময় উত্তর দিয়েছেন, ‘আমার দুই সন্তান।’
আমাদের সমাজে এখনো ছেলেসন্তান না থাকা মানে একধরনের অপূর্ণতা ও ব্যর্থতা। কিন্তু কোনোদিন মা–বাবাকে এ নিয়ে আফসোস করতে দেখিনি। উল্টো বাবা খুবই আনন্দিত তাঁর দুই মেয়েকে নিয়ে। আনন্দিত হয়ে ছোট কন্যার নাম রাখলেন আনন্দিতা।
মা–বাবাকে যখনই কেউ জিজ্ঞেস করেছে, ‘আপনাদের কয় ছেলেমেয়ে?’ বাবা মুক্তিযোদ্ধা ইসহাক খান সব সময় উত্তর দিয়েছেন, ‘আমার দুই সন্তান।’
একটা ছেলে সমাজে যেভাবে চলাফেরা করতে পারে, আমরাও ছোটবেলা থেকে একই রকম স্বাধীনতা পেয়ে এসেছি। জীবনে কোনো সান্ধ্য আইন ছিল না যে এই সময়ের মধ্যে বাসায় ফিরতে হবে। বাবা আমাদের প্রচুর স্বাধীনতা দিয়েছেন, সঙ্গে এই শিক্ষাও দিয়েছেন যেন স্বাধীনতার অপব্যবহার না করি। তিনি আমাদের সব সময় উৎসাহ দিতেন যেন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারি। বাবা বলতেন, মাস্টার্স শেষ করে চাকরি পেয়ে তারপর বিয়ের কথা ভাবতে হবে, তার আগে নয়। প্রত্যেক মেয়ের একটা নিজস্ব পরিচয় থাকা খুবই জরুরি।
আমরা সৌভাগ্যবান যে আমি আর আমার বোন নিজেদের একটা পরিচয় বানিয়ে নিতে পেরেছি।
বাবা মৃদুভাষী, বিচক্ষণ, ঠান্ডা মেজাজের মানুষ। তাঁর সঙ্গে যেকোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যায়। আগে তিনি মন দিয়ে কথা শুনবেন, তারপর মতামত দেবেন। সন্তানদের মতামতও গুরুত্বসহকারে শোনেন। আমরা ছোট, মেয়ে, বা আমরা কম বুঝি—এ ধরনের মনোভাব কখনো বাবার মধ্যে দেখিনি।
আমরা খুবই সৌভাগ্যবান যে ইসহাক খানকে বাবা হিসেবে পেয়েছি। বাবা, তুমি সুস্থ, সুন্দর থাকো—এই কামনা করি সব সময়।
সিনিয়র লেকচারার, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ