লেখক বন্ধু উৎসব শিখিয়েছে—স্বপ্ন থাকলে পথ তৈরি হয়
এই প্রথমবার অংশ নিলাম লেখক বন্ধু উৎসবে। জানলাম অনেক অজানা বিষয়—কীভাবে বই পড়ে লেখা উন্নত করা যায়, কীভাবে আত্মবিশ্বাস তৈরি করতে হয়, লেখালেখির কৌশল কী।
লেখক বন্ধু উৎসবে অংশ নেওয়ার ইচ্ছাটা অনেক দিনের। ২০২৩ সালে প্রথমবার উৎসব হয়েছিল, সেবার অংশ নিতে পারিনি। হঠাৎ একদিন প্রথম আলো বন্ধুসভার ফেসবুক পেজে চোখে পড়ে একটি ঘোষণা—দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘লেখক বন্ধু উৎসব’। এই উৎসবের অংশ হিসেবে অনলাইনে চার পর্বে লেখালেখি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে।
গত ২৮ ও ২৯ মে এবং ১ ও ৫ জুন, চারটি পর্বে ভার্চ্যুয়ালি এই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালায় ফিচার, কবিতা, গল্প ও সংবাদ—এই চার বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সেখান থেকে জানতে পারি, কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে ঢাকায় দিনব্যাপী লেখক বন্ধু উৎসবের আয়োজন করা হবে। তখন থেকেই উৎসাহ বাড়তে থাকে। কবে হবে সেই উৎসব? আমি কি যেতে পারব?
অবশেষে বহু প্রতীক্ষার পর, ১৮ জুন বিকেলে বন্ধুসভা জাতীয় পর্ষদ থেকে একটি ই–মেইল আসে—১১ জুলাই, শুক্রবার ঢাকার প্রথম আলো কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হবে লেখক বন্ধু উৎসব ২০২৫। সারা দেশের লেখক বন্ধুরা অংশ নেবেন এই আয়োজনে। দিন যত এগোতে থাকে, উৎসাহ বাড়তে থাকে।
কিন্তু এর মধ্যেই নেমে আসে বাধার ছায়া—টানা বৃষ্টির কারণে নিজ জেলা ফেনীতে শুরু হয় বন্যা। বাড়ির রাস্তা ডুবে যায় পানিতে। এখন কীভাবে ঢাকায় যাব? মনের ভেতর শুরু হয় দুশ্চিন্তার ঝড়। তবু সাহস হারাইনি। ১০ জুলাই বিকেলে ফেনী শহরে বাস কাউন্টারে গিয়ে ১১ জুলাই ভোরের জন্য টিকিট কাটলাম। কিন্তু ভোরবেলা এই ঝুম বৃষ্টির মধ্যে কীভাবে কাউন্টারে পৌঁছাব?
শুক্রবার, ভোর চারটায় একটি সিএনজিতে রওনা হয়ে পৌঁছাই বাস কাউন্টারে। সকাল পাঁচটায় ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিলাম সেই বহুদিনের স্বপ্ন, লেখক বন্ধু উৎসবে অংশ নিতে। সকাল নয়টার দিকে পৌঁছে যাই প্রথম আলো বন্ধুসভার কক্ষে। সেখানে রেজিস্ট্রেশন শেষে পরিচয় হয় নতুন অনেক বন্ধুর সঙ্গে। সবার সঙ্গে প্রথম আলো ক্যানটিনে নাশতা শেষ করে মূল আয়োজনে অংশ নিই।
সভাকক্ষে শুরু হয় উৎসবের মূল আনুষ্ঠানিকতা। সমবেত কণ্ঠে পরিবেশিত হয় জাতীয় সংগীত। একে একে পরিচয় ঘটে গাজীপুর, ভৈরব, রংপুর, ঢাকা ও আরও অনেক এলাকার বন্ধুসভার বন্ধুদের সঙ্গে।
উৎসবের প্রথম পর্বে বক্তব্য দেন প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক, কবি ও কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক। কিছুক্ষণ পর আসেন কবি কামরুজ্জামান কামু। কামু ভাইয়ের জীবন থেকে পাওয়া অনুপ্রেরণার কথা সত্যিই মন ছুঁয়ে যায়—তিনি কখনো গান শেখেননি, অথচ নিজের লেখা গান নিজের সুরে গেয়ে অনেক পুরস্কার পেয়েছেন।
এরপর একে একে কথা বলেন কথাসাহিত্যিক মোহিত কামাল, সুবর্ণ প্রকাশনীর প্রকাশক শাহরিন হক, নৈঋতা ক্যাফের উপদেষ্টা প্রকাশক রাহেল রাজিব, স্বরে অ প্রকাশনীর প্রকাশক আবু বকর সিদ্দিক, প্রথম আলোর অন্য আলো জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক (সাহিত্য) ফিরোজ এহতেশাম। উৎসবটি হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত এক মিলনমেলা—লেখক বন্ধুদের মুক্ত আলোচনা, প্রকাশক-লেখক আড্ডা এবং সর্বোপরি সেরা পাঁচ লেখক বন্ধুকে সম্মাননা প্রদান।
এই প্রথমবার অংশ নিলাম লেখক বন্ধু উৎসবে। জানলাম অনেক অজানা বিষয়—কীভাবে বই পড়ে লেখা উন্নত করা যায়, কীভাবে আত্মবিশ্বাস তৈরি করতে হয়, লেখালেখির কৌশল কী। এই আয়োজন কেবল একটি কর্মশালা ছিল না, বরং এটি ছিল দক্ষতা বৃদ্ধি, সৃজনশীল বিকাশ এবং বন্ধুত্বের বন্ধন গড়ে তোলার এক অনন্য অভিজ্ঞতা। এই উৎসব আমাকে শিখিয়েছে—স্বপ্ন থাকলে পথ তৈরি হয়। শুধু সাহস করে প্রথম পদক্ষেপটি নিতে হয়।
কার্যনির্বাহী সদস্য, ফেনী বন্ধুসভা