মাথার ওপর ছাতা ধরার সামর্থ্য

ছোটবেলায় প্রতিদিন বিকেলে পুকুরপাড়ে বাবার সঙ্গে হাঁটতে যাওয়া, মাছেদের মুড়ি দেওয়া থেকে রাতে বারান্দায় টুল নিয়ে বসে থাকা, গল্প শোনা এখনো স্মৃতিকাতর করে তোলে। সন্ধ্যা হলেই পাটিগণিত করার সময় হলে বাবার কাছে চলে যেতাম। যতক্ষণ জেগে থাকতেন পেছন পেছন ঘুরতাম, ঘুম এলেও যেতাম না। বৃহস্পতিবারে গানের স্কুলে নিয়ে যেতেন, আর ফেরার সময় বাজারে গিয়ে মাছ কিনে আনতাম দুজনে মিলে।

একাডেমিক পর্যায়ের বোর্ড পরীক্ষা থেকে শুরু করে চাকরির পরীক্ষাগুলো দেওয়ার সময়ও বাবাকে অনেক জ্বালিয়েছি। খেতে সময় বেশি লাগত বলে এইচএসসি পরীক্ষার সময় বলতাম পাটশাকের ডাল রান্না করে দিতে, যাতে তাড়াতাড়ি খেয়ে পরীক্ষা দিতে যেতে পারি। ঢাকায় চাকরির পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় রাত ১টায় বাস কাউন্টারে নিয়ে আসা, আবার পরদিন পরীক্ষা শেষে রাতে ফিরে দেখতাম, বাবা বাস কাউন্টারে বসে আছেন।

বিসিএস পরীক্ষার সময় তো সকালবেলা আমাদের দুজনের ছোটখাটো একটা বিবাদ হয়ে যেত, কেন আমি পরীক্ষার দিন দেরি করে ঘর থেকে বের হই। এ নিয়ে নোয়াখালীতে থাকা মাকে প্রতিদিন অভিযোগও করতেন মোবাইলে। বলতেন, ‘তোমার মেয়েকে তুমি এসে সামলাও। আমি আর পারছি না। প্রতিদিন দেরি করবে আর আমি টেনশনে শেষ হয়ে যাই।’

বৃষ্টি হলেই বাসা থেকে বাবার জন্য ছাতা নিয়ে অফিসে চলে যাওয়া একসময়ের ছোট্ট আমি বড় হয়ে চাকরির পরীক্ষা দিতে দিতে ভাবতাম, আমি কি কখনো মা–বাবার মাথার ওপর ছাতা ধরার সামর্থ্য অর্জন করতে পারব? ভগবানের অশেষ কৃপায় সেই আশা পূরণ হয়েছে।

ধন্যবাদ বাবা, জীবনকে এত রঙিন করে দেওয়ার জন্য। ধন্যবাদ, প্রমোশন হলে কলোনি ছাড়তে হবে দেখে অবসর পর্যন্ত একই পদে চাকরি করে যাওয়ার জন্য। আপনার বদৌলতে আমরা একটা নির্মল, সুন্দর, আদর্শ পরিবেশে বেড়ে ওঠার সুযোগ পেয়েছি। আপনার এই উচ্চাকাঙ্ক্ষাবিমুখ মনোভাব ও পরিবারপ্রীতি স্বভাব আমরা ভাইবোনেরাও পেয়েছি।

প্রভাষক, হিসাববিজ্ঞান বিভাগ, নোয়াখালী সরকারি কলেজ।