কবিতা লিখতে হলে প্রচুর কবিতা পড়তে হবে। কবিতা পড়তে গেলে কিছু বিষয় লাগে। যেমন ছন্দ জানতে হয়, নয়তো কবিতা পড়া যায় না। যে ছন্দ গদ্যের অনেক কাছাকাছি, যেমন শামসুর রাহমানের কবিতা বা জীবনানন্দের কবিতা, অক্ষরবৃত্ত। এই ছন্দ অনেকটা গদ্যের মতো। অনেকে মনে করেন এগুলো গদ্যকবিতা। আসলে তা নয়। অক্ষরবৃত্তকে গদ্যের কাছাকাছি জীবনানন্দ নিয়ে গেছেন।
কবিতা শুধু অর্থের দিক থেকে নয়, ধ্বনির দিক থেকেও বদলে গেছে সময়ে সময়ে।
কবিতা লেখার কলাকৌশল জানতে হলে কবিতা বেশি বেশি পড়তে হবে। ছন্দ জানতে হবে (স্বরবৃত্ত, অক্ষরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত)। কবিতা ধ্বনি নিয়ে এগোয়, আর ভাষা ধ্বনিনির্ভর। ধ্বনির বিন্যাসই হচ্ছে ছন্দ। কবিতার ভাষা ইঙ্গিতপূর্ণ। সেখানে কিছু কৌশল থাকে, যেমন উপমা। উপমা মানেই জিনিসটা আর সরলভাবে বলা হলো না। কোনো কিছুর সঙ্গে তুলনা করে বলা হলো। সব মিলিয়ে একটা আড়ালের ভাষা হয়, যেটা সরাসরি নয়। এগুলো প্রথমেই শিখে নিতে হবে।
মানুষের সঙ্গে প্রচুর মিশতে হবে, তাদের জীবনের গল্প শুনতে হবে। পৃথিবীটা দেখতে হবে। তাহলে অভিজ্ঞতা বাড়বে। সেই অভিজ্ঞতা কবিতা লেখার সময় উঠে আসে। কবিতা গভীর হয়। এগুলো বই পড়ে শেখা যাবে না।
ছন্দ ছাড়া কবিতা লেখা যাবে, তবে পড়া যাবে না। জীবনানন্দ, রবীন্দ্রনাথ, নজরুলসহ বড় কবিদের কবিতা বুঝে পড়তে গেলে ছন্দের নিয়ম জানতে হবে। নয়তো ধ্বনির বিন্যাস বোঝা যাবে না। ধ্বনি অর্থের সঙ্গেও জড়িত। ধ্বনির বিন্যাসের হিসাব ধরতে না পারলে পড়াটা পূর্ণাঙ্গ হবে না।
কবিতায় ভাব প্রকাশ করতে গেলে অলংকার এমনিতেই চলে আসে। আপনি যদি বিবৃতির মতো করে একটা লাইন লেখেন, সেটা তো কবিতা নয়। অলংকার জেনে তারপর লিখতে হবে।
উল্লেখ্য, প্রথম আলো বন্ধুসভার ভার্চ্যুয়াল লেখালেখি কর্মশালার দ্বিতীয় পর্ব অনুষ্ঠিত হয় ২৯ মে। কর্মশালায় ‘কবিতা’ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেন কবি কামরুজ্জামান কামু। ওপরের লেখাটি তাঁর আলোচনার প্রতিলিপি।