বর্ষায় ভ্রমণে এই জায়গাগুলো হতে পারে সেরা গন্তব্য
বর্তমানে অনেকে বর্ষাকালকে বেড়ানোর জন্য আদর্শ মনে করেন। এই সময় হাওর, ঝরনা ও লেক পানিতে টইটম্বুর থাকে। চা-বাগান ও পাহাড়ি অঞ্চলও সবুজে অপরূপ সৌন্দর্য ধারণ করে। দেশে বর্ষাকাল শুরু হয়েছে। তবে এ বছর গ্রীষ্মকালে প্রচুর বৃষ্টি হওয়ায় এরই মধ্যে হাওর, ঝরনা ও লেকে প্রচুর পানি হয়েছে। ভ্রমণপিপাসুরাও ছুটে যাচ্ছেন। কেউ বন্ধুদের সঙ্গে, কেউ পরিবারের সঙ্গে, আবার কেউ বিভিন্ন ভ্রমণ গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ছুটে যাচ্ছেন অবকাশ যাপন করতে।
বর্ষাকালে বেড়ানোর জন্য বাংলাদেশের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান
টাঙ্গুয়ার হাওর
বর্ষা মৌসুমে অপরূপ সৌন্দর্য ধারণ করে টাঙ্গুয়ার হাওর। চারদিকে পানি আর পানি। যত বেশি পানি, তত বেশি সুন্দর এই হাওর। টাঙ্গুয়ার হাওর সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর ও ধর্মপাশা উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা নিয়ে অবস্থিত। ভারতের মেঘালয়ের খাসিয়া, জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে পাখিদের কলকাকলিতে মুখরিত বাংলাদেশের এক বিশাল শীতল জলাভূমির নাম। নয়কুড়ি কান্দার ছয়কুড়ি বিল নামেও পরিচিত এই হাওর বাংলাদেশের অন্যতম মিঠাপানির জলাভূমি। প্রায় ১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে এর বিস্তৃতি। হাওরে প্রায় ৪৬টি গ্রাম রয়েছে। বর্ষায় পানিতে টইটম্বুর থাকায় গ্রামগুলোকে ছোট ছোট দ্বীপ মনে হয়।
কয়েকটি পথ দিয়ে এই হাওরে প্রবেশ করা যায়। সুনামগঞ্জ শহরের সাহেববাড়ি ঘাট ও তাহিরপুর উপজেলার নামাবাজার ঘাট সবচেয়ে জনপ্রিয়। এই দুই ঘাটে বিলাসবহুল হাউসবোটসহ ঐতিহ্যবাহী নৌকা ভাড়া পাওয়া যায়। হাওরে ভ্রমণ আরামদায়ক করতে সেখানে যাওয়ার আগেই নৌকা ভাড়ার কাজটি সেরে ফেলতে হবে। নৌকার মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগের ঠিকানা ফেসবুকসহ নানা মাধ্যমে পেয়ে যাবেন। আর যাঁরা হাওরের আদি অভিজ্ঞতা আর অ্যাডভেঞ্চার চান, তাঁরা চিরায়ত নৌযান নিতে পারেন।
কাপ্তাই লেক
প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য ভরপুর কাপ্তাই লেক। চট্টগ্রামের কাপ্তাই উপজেলায় অবস্থিত কৃত্রিম এই হ্রদ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে আয়তনে সর্ববৃহৎ, ১১ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। রয়েছে ছোট ছোট পাহাড়, আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তা, নদীপথ, ঝরনা আর সবুজের মিতালি। লেকের পাহাড়ে রয়েছে বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণী এবং লেকের পানির গভীরে বহু প্রজাতির মাছ। সব মিলিয়ে অফুরন্ত জীববৈচিত্র্যের এক বিশাল সমারোহ। সারা বছরই এই লেক ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত। তবে বর্ষাকালে পানি বেশি থাকায় এর সৌন্দর্য ভিন্নরূপ লাভ করে। এখানেও টাঙ্গুয়ার হাওরের মতো দৃষ্টিনন্দন সব হাউসবোট রয়েছে। আরও আছে ছোট ছোট নৌকা। থাকার জন্য আশপাশে অসংখ্য রিসোর্ট রয়েছে।
ঝরনা বা জলপ্রপাত
দেশে অসংখ্য ঝরনা রয়েছে। বিশেষ করে বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, চট্টগ্রাম, সিলেট, মৌলভীবাজারে আছে ছোট-বড় অনেক ঝরনা। এর মধ্যে অন্যতম বান্দরবান জেলার নাফাখুম, শৈলপ্রপাত, রূপমুহুরী, জাদিপাই, হামহাম; রাঙামাটি জেলার ধুপপানি, শুভলং, হাজাছড়া; চট্টগ্রাম জেলার সহস্রধারা, সুপ্তধারা, ঝরঝরি, নাপিত্তাছড়া, খৈয়াছড়া, সোনাইছড়ি, বোয়ালিয়া, বাওয়াছড়া, মহামায়া, রূপসী, মধুখায়া; সিলেট জেলার পান্থুমাই, সংগ্রামপুঞ্জি, কুলুমছড়া এবং জাফলংয়ের আশপাশেও কিছু ছোট ঝরনা দেখতে পাওয়া যায়; মৌলভীবাজার জেলার মাধবকুণ্ড, হাম হাম; এবং খাগড়াছড়ি জেলার রিছাং ঝরনা পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণীয়।
বর্ষায় প্রাণ ফিরে পায় এসব ঝরনা। গহিন পাহাড়ের এই জলপ্রপাতগুলো দেখতে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেন রোমাঞ্চপ্রিয় মানুষেরা। এই বর্ষায় আপনি চাইলে ঘুরে আসতে পারেন।
সিলেট
বর্ষায় বেড়ানোর জন্য সেরা গন্তব্য হতে পারে সিলেট। এই মৌসুমে জেলার পর্যটনস্থান জাফলং, রাতারগুল, ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর, বিছনাকান্দি—এসব স্থান মোহনীয় রূপে সেজে ওঠে। এ ছাড়া চা-বাগানগুলো বৃষ্টির কারণে সবুজ প্রকৃতিতে ছেয়ে যায়।
বরিশাল
বর্ষাকালে বরিশাল, পিরোজপুর ও ঝালকাঠির কয়েকটি উপজেলার মানুষের জন্য নৌকাই তাঁদের প্রধান বাহন। নৌকাতেই বসে নিত্যদিনের হাট, জলপথেই আসেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। ঝালকাঠির ভীমরুলি ভাসমান পেয়ারার হাট দেশব্যাপী সমাদৃত। বর্ষায় (মধ্য আগস্টে) এই হাট পুরোপুরি জমে ওঠে। স্থানীয় মানুষের পাশাপাশি অসংখ্য পর্যটক এখানে ঘুরতে আসেন। যাওয়ার সময় পেয়ারা কিনে নিয়ে যান। ট্রলার ও ডিঙিনৌকায় করে এক এলাকা থেকে আরেক এলাকা ঘুরে দেখা যায়।
মিঠামইন হাওর
কিশোরগঞ্জের ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল নিয়ে মিঠামইন হাওর। বর্ষাকালেই কেবল এই হাওর জেগে ওঠে। চারদিকে পানি আর পানি। দেখলে মনে হবে আশপাশের গ্রামগুলো পানিতে ভেসে আছে। গ্রামগুলো একেকটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো। হাওর ঘুরে দেখার জন্য স্পিডবোট, হাউসবোট, নৌকা পাওয়া যায়। আগে থেকেই এগুলো ঠিক করে নিতে হয়। কয়েক বছর ধরে পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান এই হাওর।
সমুদ্র
অনেকে মনে করেন, সমুদ্রে বেড়াতে যাওয়ার সবচেয়ে ভালো সময় শীতকাল। তবে যাঁদের বর্ষা পছন্দ, তাঁরা এই মৌসুমে ঘুরে আসতে পারেন। মেঘলা আকাশ, সমুদ্রের গর্জন—সব মিলিয়ে অসম্ভব সুন্দর এক পরিবেশের তৈরি হয়। তাই সময় করে ঘুরে আসতে পারেন কক্সবাজার কিংবা কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে।