চাকা ঘুরছে, আমি ভাসছি

ছবি: এআই/বন্ধুসভা

টিনের চালে ঝমঝম বৃষ্টি পড়ার শব্দ। টিউশনি আজকের মতো শেষ। বের হয়ে সাইকেলের সিটে বসে চলা শুরু। চোখমুখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে অঝোর ধারা। চারপাশ অন্ধকার। জলের ধারায় লাইট কখন বন্ধ হয়ে যায় ঠিক নেই। যতক্ষণ আছে চলতে হবে। ভিজে যাওয়া চুল ঘন হয়ে এসে কপালের দিকে হেলে পড়ে। চুলের জল চোখের পাপড়ি ছুয়ে এসে ঠোঁট বেয়ে গলার দিকে চলে যায়। চাকা ঘুরছে।

ব্রেক কখন কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে বুঝতে পারিনি। লাল ইটের রাস্তার ঝাঁকুনি যেন সমুদ্রের ঢেউ। ডুবছি আমি। ভাসছি তবু। এ জোয়ার আমাকে নিয়ে যাক যেখানে খুশি। ভাসব আজ। উড়ব আজ। হারিয়ে যাব কোথাও। বোধ হয় বৃষ্টির জলের সঙ্গে ঘাম ঝরে যাচ্ছে। শীতল ধারায় বুঝতে পারছি না। হাতের ঘড়ি বন্ধ হয়ে গেছে জলের ক্ষমতার কাছে হার মেনে। সাদা চেক শার্ট আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে। হাতের ভাঁজ আরও শক্ত হয়ে যায়। স্যান্ডো গেঞ্জি চেপে ধরে আছে শরীরের সঙ্গে। গলার সঙ্গে ভারী হয়ে কলার লেগে আছে। ভারী কাপড়ের ভিজে যাওয়া প্যান্টের জন্য প্যাডেল দেওয়া একটু মুশকিল।

ফোনে অ্যালার্ম বেজে যাচ্ছে। একটু থেমে বন্ধ করার উপায় নেই। কখনো পিচঢালা কালো পথ, আবার কখনো লাল ইটের রাস্তায় ঢেউ খেলে কাকভেজা হয়ে গেটের কাছে এসে থামি। শরীর থেকে একটা ভ্যাপসা গরম বের হয়ে যাচ্ছে। জ্বর আসবে না তো! হয়তো আসবে না। গত দশ বছরেও জ্বর আসেনি। কোভিড মহামারিতে টানা দুই বছরের বেশি রাতদিন হাসপাতালে ডিউটি করে এসেছি। এই সাইকেল নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজে, রোদে শুকিয়ে ভ্যাক্সিনেশন ক্যাম্পেইন করেছি। তখনো জ্বর আসেনি। এখনো আসবে না। শরীর আমাকে চিনে গেছে।

জ্যৈষ্ঠ মাসের ভ্যাপসা গরমে ভিজব নাহয় আরও কতবার। চলতে চলতে হারিয়ে যাব জলের ধারায় অথবা সময়ের। আমরা বোধ হয় হারিয়ে যেতেই এখানে এসেছি। ঢেউয়ের সঙ্গে চলতে চলতে হারাতে এসেছি।

বন্ধু, সিলেট বন্ধুসভা