বাবা দিবস
আমার মেয়েরাই আমার গর্ব
আমাদের বেড়ে ওঠায় বাবাদের অবদান অনেক। তাঁরা সেই অবদানের কথা প্রকাশ করতে চান না। সব সময় সন্তানের ছায়া হয়ে আড়ালে থাকতে পছন্দ করেন। সন্তান হিসেবে আমরাও বাবাদের কৃতজ্ঞতা জানাতে ভুলে যাই। ১৫ জুন ছিল বাবা দিবস। এ উপলক্ষে বাবাকে না বলা কথা লিখে পাঠিয়েছেন বন্ধুসভার বন্ধু ও পাঠকেরা।
আমার শৈশব ছিল মায়ের শূন্যতায় মোড়ানো। তবে সেই অভাব কখনো অনুভব করতে দিতেন না বাবা। তিনি ছিলেন মা ও বাবা দুই–ই। তিনি ছিলেন অভিভাবক, বন্ধু, অদৃশ্য এক স্নেহচ্ছায়া; যিনি এক হাতে আমাদের পাঁচ বোনকে আগলে রেখেছিলেন পাহাড়ের মতো মজবুত হয়ে।
আমরা পরপর পাঁচ বোন। বাবা কখনো মুখ ভার করেননি, একবারের জন্যও মনে করেননি যে তাঁর জীবনে ছেলের প্রয়োজন ছিল। সমাজের কটুকথা, আত্মীয়দের চাপ, চারপাশের কুসংস্কার—সবকিছুর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তিনি বলতেন, ‘আমার মেয়েরাই আমার গর্ব।’ পরে অবশ্য আমার দুটো ভাই হয়।
বাবা আমাদের চরিত্র, মূল্যবোধ, ধর্মীয় শিক্ষা—সব দিক দিয়ে গড়ে তুলেছেন পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে। তিনি শহরে থাকতেন, আমরা গ্রামের বাড়িতে মা আর দাদির সঙ্গে। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর অপেক্ষা করতাম, বাবা কখন আসবেন? যখন ফিরতেন, হাতে থাকত আম, লিচু কিংবা কোনো ছোট উপহার। গভীর রাতে যখন সবাই ঘুমিয়ে পড়ত, তখন তিনি আমাদের জাগিয়ে তুলতেন, নিজ হাতে আম ও দুধ মিশিয়ে ভাত খাওয়াতেন। মনে হতো, পৃথিবীর সব ভালোবাসা যেন আমাদের চারপাশেই ঘোরাফেরা করছে।
বাবা নেই, কিন্তু তাঁর ছায়া আজও আমাদের চারপাশে। দুঃসময়ে মনে হয়, তিনি আছেন পাশেই, নীরবে সান্ত্বনা দিচ্ছেন।
মায়ের মৃত্যুর পর থেকে আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত থাকতেন বেশি। সেই অস্থিরতা হয়তো বাবাকে ভেতরে ভেতরে ক্ষয়ে দিচ্ছিল। একসময় ধরা পড়ে হৃদ্রোগ। হার্টে রিং পরানো হয়। তারপরও তিনি আমাদের চিন্তায় মগ্ন থাকতেন। হঠাৎ একদিন—২০১৯ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর, সন্ধ্যা ছয়টা। আবারও হার্ট অ্যাটাক। সব শেষ হয়ে গেল। চট্টগ্রাম মেডিকেলেই থেমে গেল বাবার হৃৎস্পন্দন।
বাবা নেই, কিন্তু তাঁর ছায়া আজও আমাদের চারপাশে। দুঃসময়ে মনে হয়, তিনি আছেন পাশেই, নীরবে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। আজও চোখ বন্ধ করলে অনুভব করি, তিনি মাথায় হাত রাখছেন, দোয়া করে দিচ্ছেন। বাবা ছিলেন জীবনের শ্রেষ্ঠ আশ্রয়, মায়ের অভাব পূরণ করার এক অনন্য নায়ক।
সাধারণ সম্পাদক, পটিয়া বন্ধুসভা