সীমানা পেরিয়ে দৃষ্টি আজ অসীম
‘হ্যালো দাদা! উঠো, সকাল হয়ে গেছে। আমি ১০ মিনিট পর বের হচ্ছি, আম্বরখানায় আসো।’
—আসছি রে…
এরপর আম্বরখানায় গিয়ে চা আর গল্প। গত নভেম্বর মাসে এটাই ছিল প্রায় প্রতিদিনের রুটিন। সকালে কোনো প্রোগ্রাম থাকলে দৃষ্টি এসে আমাকে ডেকে তুলত। সময়ের আগে ঘুম থেকে জাগিয়ে দিত। দৃষ্টি এমনই ছিল—দুর্দান্ত, লক্ষ্য স্থির করে এগিয়ে যাওয়া এক মেয়ে। চঞ্চল ছিল, তবে সবার প্রতি তার মায়া ছিল অপার।
এই তো গত রবীন্দ্রজয়ন্তীতে গিটার হাতে গান গেয়েছিল। ‘পাখির জন্য ভালোবাসা’ আয়োজনে যখন আমরা অনেকেই সাহস পাইনি গাছে উঠতে, সে তখন টুপ করে উঠে গিয়েছিল। প্রায়ই বলত, ‘দাদা এটা করব, দাদা ওটা করব।’ নিজের ভাইয়ের মতো আবদার করত।
সংক্রান্তির সময় আগেভাগেই নিমন্ত্রণ দিয়ে বলত, ‘আমাদের বাসায় আসবা।’ গত শীতে আমরা যখন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য পিঠার আয়োজন করলাম, দৃষ্টি আর তাঁর বোন এগিয়ে এল, ‘আমরা পিঠা বানিয়ে আনব।’ যেই কথা, সেই কাজ। পিঠা তৈরি করে নিয়ে এল।
কোনো কাজেই না করত না মেয়েটা। ঘরের ছোট হলেও যেন বড় মেয়ের মতো ঘর-সংসার আর বাইরের কাজ সামলাত।
কিন্তু সেদিন শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) বৃষ্টি ফোন করে জানাল দৃষ্টি আইসিউতে। কিছু না ভেবে দৌড়ে চলে গেলাম মেডিকেলে। দৃষ্টি একবারও চোখ মেলেনি, চুপচাপ শুয়ে ছিল। কতজনের কাছে দৌড়েছি, সামান্য আশার আলো পাওয়ার জন্য। কিন্তু কেউই বলেনি যে সে ফিরবে। শুনলাম, ৯৫% চান্স নেই। তবু আমরা আশায় ছিলাম। ফয়সাল ভাই, সমীর ভাই, জয়, সুবর্ণা—একেকজন রাত কাটিয়েছে এই আশায় যে দৃষ্টি ফিরে আসবে। কিন্তু দৃষ্টি আর ফিরল না।
দৃষ্টির সব সময় একটাই অভিযোগ ছিল, ‘দাদা, আমার মেসেজ সিন করো না।’
আজ প্রতিজ্ঞা করছি বোনরে, আর কখনো কারও মেসেজ ফেলে রাখব না। গত বছর সে ঘটা করে ভাইফোঁটা দিয়েছিল, কিন্তু ভাই হয়ে আমি তাঁকে ধরে রাখতে পারলাম না।
গত সোমবার বিকেল ৪টায় ফোন এল, ‘সময় বেশি নেই, চলে আয়।’ অফিস থেকে তাড়াহুড়া করে বের হব, ঠিক তখনই খবর পেলাম, দৃষ্টি আর নেই। আমরা হেরে গেলাম।
দেখ দৃষ্টি, তুই জিতলি। এত মানুষকে ভালোবাসায়, মায়ায় জড়িয়ে আজ তুই নেই। পাখি হয়ে তুই উড়ে গেলি অনন্ত গন্তব্যে, রেখে গেলি সবাইকে অশ্রু আর স্মৃতির বাঁধনে। কিন্তু জানিস, দৃষ্টি? তুই থাকবি আমাদের ভেতরে, সবার হৃদয়ে, সবার কাজে।