যেসব পাখি তাদের বাচ্চাদের দুধ খাওয়ায়

পাখির মধ্যে কয়েকটি প্রজাতি রয়েছে, যারা তাদের বাচ্চাদের দুধ খাওয়ায়
ছবি: সংগৃহীত

সাধারণত মানুষ ও অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীরা বাচ্চাদের দুধ খাওয়ায়, যা তাদের অন্য প্রাণী থেকে আলাদা করে তোলে। সেই অন্য প্রাণীদের মতো পাখির স্তন্যপায়ী গ্রন্থি নেই। ফলে তারা তাদের বাচ্চাদের শিকার করে আনা বিভিন্ন পোকামাকড় ও অন্যান্য খাবার খাওয়ায়। যাহোক, প্রকৃতির নিয়মেও কখনো কখনো ব্যতিক্রম হয়। পাখিদের মধ্যেও রয়েছে সেই ব্যতিক্রম।

পাখির মধ্যে কয়েকটি প্রজাতি রয়েছে, যারা তাদের বাচ্চাদের দুধ খাওয়ায়। এই দুধকে ‘ক্রপ মিল্ক বা ফসলের দুধ’ বলে। স্তন্যপায়ী প্রাণীরা যে ধরনের দুধ উৎপন্ন করে, এগুলো তেমন নয়। এই দুধে কোনো দুগ্ধ-শর্করা নেই এবং গ্রন্থি থেকেও উৎপন্ন হয় না। তবে স্তন্যপায়ী প্রাণীরা যে উদ্দেশ্যে তাদের বাচ্চাদের দুধ খাওয়ায়, ঠিক একই উদ্দেশ্যে বাচ্চাদের ফসলের দুধ খাওয়ায় পাখিরা। স্তন্যপায়ী দুধের মতো ফসলের দুধে চর্বি ও প্রোটিন উভয়ই থাকে।

বাচ্চার লালনপালনের জন্য পাখি তার নিজের খাদ্যনালিতে বিশেষ প্রক্রিয়ার একধরনের খাদ্য তৈরি করে—এই খাদ্যকে ক্রপ মিল্ক বা ফসলের দুধ বলে। পক্ষীবিদ ড. সারা ওয়াগনার বলেন, ‘নামের মিল হলেও ক্রপ মিল্ক সত্যিকারের কোনো দুধ নয়। এটি দুধের মতো প্রোটিন ও চর্বিসমৃদ্ধ একটি নিঃসরণ, যা তুলনামূলকভাবে কার্যকর।’

কবুতর
ফাইল ছবি

কবুতর
ফসলের দুধ উৎপন্ন করার জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিত কবুতর। ডিম ফোটার পরপরই খাদ্যনালিতে ছানাদের জন্য ঘন, হলুদ-সাদা তরল বা ফসলের দুধ উৎপন্ন করে পুরুষ ও মহিলা উভয় সদস্য। কবুতরের ছানা জন্মের প্রথম কয়েক দিন কোনো ধরনের শক্ত খাবার খেতে পারে না। তখন এই তরল দুধ খাইয়ে তাদের বাঁচিয়ে রাখে পুরুষ ও মহিলা কবুতর। এতে প্রায় ৬০ শতাংশ প্রোটিন ও উচ্চমাত্রার চর্বি থাকে, যা জন্মের প্রথম সপ্তাহে ছানাদের বেড়ে উঠতে সহায়তা করে। এই দুধ প্রোল্যাকটিন হরমোনের মাধ্যমে উৎপাদিত হয়। একই হরমোন স্তন্যপায়ী প্রাণীদের দুধ উৎপন্নেও কাজ করে।

ফ্লেমিঙ্গো পাখি
ছবি: এএফপি

ফ্লেমিঙ্গো
উজ্জ্বল লাল রঙের ফসলের দুধ উৎপন্ন করে ফ্লেমিঙ্গো প্রজাতির পুরুষ ও মহিলা উভয় সদস্য। এই লাল রং আসে তাদের খাদ্যতালিকায় থাকা ক্যারোটিনয়েড রঞ্জক থেকে।

ফ্লেমিঙ্গোর ফসলের দুধও প্রোটিন ও উচ্চমাত্রার চর্বিযুক্ত। পাশাপাশি এটি তাদের ছানার জন্মের পর শুরুর দিনগুলোতে ইমিউন বাড়াতে সহায়তা করে। জন্মের পর প্রথম কয়েক সপ্তাহ ছানারা ফসলের দুধের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। ২০২২ সালে ন্যাশনাল ওয়াইল্ডলাইফে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুসারে, ‘ছানাদের জন্য ফ্লেমিঙ্গোর ফসলের দুধ এতটাই প্রয়োজনীয় যে এই সময়ে মা-বাবার শরীরের ওজন ১০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়।’

পেঙ্গুইন
ছবি: সংগৃহীত

সম্রাট পেঙ্গুইন
পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন আবহাওয়ার মধ্যে বসবাস করে পেঙ্গুইনের এই প্রজাতি। ডিম পাড়ার পর যখন মহিলা সদস্য শিকারের খোঁজে চলে যায়, তখন পুরুষ সদস্যটি সেই ডিমকে দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে সংরক্ষণ করে রাখে। যদি মহিলা পেঙ্গুইন শিকার নিয়ে ফিরে আসার আগেই ডিম ফুটে বাচ্চার জন্ম হয়, তখন পুরুষ পেঙ্গুইনটি তার খাদ্যনালি থেকে দুধের মতো তরল পদার্থ নিঃসরণ করে বাচ্চাটিকে বাঁচিয়ে রাখে। এই তরল পদার্থ সত্যিকারে ফসলের দুধ নয়, তবে একই গুণাবলি সম্পন্ন।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া