বই পড়ায় যত লাভ
একটি ভালো বই একজন বন্ধুর মতোই বিশ্বস্ত। বই হলো এমন এক সঙ্গী, যা কখনো বিরক্ত করে না। ছেড়ে যায় না, বরং মানুষকে গড়ে তোলে ভেতর থেকে। প্রযুক্তিনির্ভর এই যুগে বইয়ের প্রতি আমাদের আগ্রহ কমে গেলেও বই পড়ার গুরুত্ব কোনো দিন কমবে না। কারণ, বই-ই আমাদের মনের খোরাক, জ্ঞানের উৎস এবং আত্মার শান্তি।
• মানসিক ব্যায়াম: শরীরকে সুস্থ রাখতে যেমন দরকার শারীরিক ব্যায়াম, তেমনি মস্তিষ্ক সচল রাখতে দরকার মানসিক ব্যায়াম। বই পড়া মানসিক ব্যায়ামের সবচেয়ে ভালো উপায়।
• মানসিক চাপ হ্রাস: একটি ভালো বই আমাদের চাপমুক্ত রাখতে পারে। গল্পে ডুবে গিয়ে বাস্তব জীবনের দুশ্চিন্তা ভুলে থাকা যায়।
• জ্ঞান অর্জন: বই আমাদের জানায় অজানা বিষয়। বাড়ায় বুদ্ধিমত্তা। অর্জিত জ্ঞান কখনো হারায় না, বরং জীবনকে আরও শক্ত ও মজবুত করে।
• শব্দভান্ডার সমৃদ্ধি: বিভিন্ন বই পড়ে আমরা শিখি নতুন শব্দ, বাক্য গঠন ও শুদ্ধ ভাষা, যা যোগাযোগ ও লেখালেখিতে কাজে লাগে। বিভিন্ন আঙ্গিকে নতুন নতুন শব্দ শেখায়। এতে শব্দভান্ডার সমৃদ্ধ হয়।
• স্মৃতিশক্তি উন্নতি: বইয়ের চরিত্র, কাহিনি, সময়কাল মনে রাখার চেষ্টা আমাদের স্মৃতিশক্তি বাড়িয়ে তোলে। স্মৃতিশক্তির দুর্বলতাকে শাণিত করে।
• বিশ্লেষণ ও চিন্তাশক্তি বৃদ্ধি: রহস্য কিংবা দার্শনিক বই পাঠককে বিশ্লেষণ করতে শেখায়, সমস্যার গভীরে গিয়ে সমাধান খুঁজে বের করার অনুশীলন করায়। তথ্য যাচাই–বাছাই করতে সহায়তা করে।
• একাগ্রতা বাড়ে: বই পড়া মনোযোগ বাড়ায়। অন্য সবকিছু ভুলে গিয়ে বইয়ের জগতে ডুবে থাকার অভ্যাস একাগ্রতাকে বাড়ায়। বাজে চিন্তাভাবনা মাথায় আসে না।
• লেখার দক্ষতা বৃদ্ধি: বলা হয় লিখতে হলে পড়তে হবে। এতে ভাষা ও কল্পনা সমৃদ্ধ হয়। বই পড়ার অভ্যাস আমাদের লেখনীশক্তিকে আরও প্রাঞ্জল ও শক্তিশালী করে।
• মানসিক প্রশান্তি: বই পড়া মানে নিজের সঙ্গে কিছু সময়। বইয়ের পৃষ্ঠা ও শব্দের মধ্যে আত্মার এক গভীর প্রশান্তি লুকিয়ে থাকে।
• নির্মল বিনোদন: বই সস্তা, গঠনমূলক ও নিঃস্বার্থ এক বিনোদনের মাধ্যম। এটি আনন্দ দেয় আবার ভাবায়ও। বই হাসি, আনন্দ উল্লাসে মনকে মাতিয়ে রাখে।
• দৃষ্টিভঙ্গির বিস্তার: বিভিন্ন দেশের সাহিত্য, ইতিহাস বা জীবনী পড়ে আমরা পৃথিবীকে দেখি ভিন্ন চোখে। আমাদের সহানুভূতি ও মানবিকতা বাড়ে। চিন্তাভাবনা ও বিবেচনার পরিধি বাড়িয়ে দেয়।
• ধৈর্য ও সময় ব্যবস্থাপনা: বই পড়া সময়ের সদ্ব্যবহার শেখায়। এতে ধৈর্য বাড়ে এবং দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য পূরণের মানসিকতা তৈরি হয়।
• আত্ম-উন্নয়ন ও আত্মবিশ্বাস: বই নিজেকে চিনতে সাহায্য করে। আত্ম-উন্নয়নমূলক বই পড়ে অনুপ্রেরণা পাওয়া যায় এবং নিজের ওপর বিশ্বাস বাড়ে।
বই শুধু জ্ঞানের সঞ্চয় নয়, একটি চরিত্র গঠনের অন্যতম মাধ্যম। একজন ভালো পাঠক কখনো একা নয়, পাঠকের বন্ধু হয়ে পাশে থাকে দার্শনিক, কবি, গল্পকার ও ইতিহাস। সমাজ, দেশ ও ভবিষ্যৎ গঠনে বইয়ের বিকল্প নেই। বইকে ভালোবাসুন, বইয়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব করুন। প্রতিদিন অন্তত ১৫ মিনিট বইয়ের পাতায় চোখ রাখুন।
সভাপতি, ময়মনসিংহ বন্ধুসভা