স্বাধীনতার স্বাদ কার না ভালো লাগে
সামান্য মা–বাবার শাসনটুকুও ছেলেমেয়েদের কাছে মাঝেমধ্যে জুলুম হয়ে যায়। নিজের পছন্দের পোশাক না পরতে পারলেও মন খারাপ লাগে! পছন্দের গান শোনা, খাবার খাওয়া, বই পড়া এবং পছন্দের স্থান ও বিষয়ে বাধা পড়লেই মনে করতে থাকি আমরা পরাধীন!
অথচ দিনের পর দিন, মাসের পর মাস বিভিন্ন চিড়িয়াখানায় বন্দী করে রাখা হয় অবলা প্রাণীদের। যারা কথা বললেও মানুষেরা বুঝতে পারে না! আমার সোনার বাংলায় বরাদ্দকৃত চিড়িয়াখানার প্রাণীদের খাদ্যের অংশও গিলে ফেলেন দায়িত্বপ্রাপ্ত মানুষ। যে প্রাণীকে চিড়িয়াখানায় রাখা হয়, তার দিকটা কেউ একবার ভেবেছে? জন্ম ও বেড়ে ওঠা, বেঁচে থাকার কথা ছিল বন ও জঙ্গলে নিজের স্বাধীনতায়। তাদের ভবিতব্য মানুষের হাতের মাধ্যমে পালটে দিয়েছে!
সম্প্রতি মিরপুর চিড়িয়াখানা থেকে পালিয়ে যাওয়া সিংহটাকে কত কারসাজি করে আবার আটক করা হলো! সে বাইরে থাকলে জনজীবন হুমকিতে থাকবে হয়তোবা! তাই বলে আবার সেই স্যাঁতসেঁতে অন্ধকার খাঁচায়, ক্ষুধা নিয়ে নির্ঘুমের জীবনে ইচ্ছার বিরুদ্ধে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে? মানুষ হয়েও অনেক জায়গায় কথা বলেও নিজের অধিকারটুকু এ জগতে অনেকেই পাচ্ছে না যেখানে, সেখানে একটি প্রাণী কি পেতে পারে? যেখানে নেই নিয়মনীতি ও সততা, প্রাণীদের প্রতি সহমর্মিতা, সেখানে প্রাণীরা ভালো থাকতেই পারে না! প্রাণীদেরও মন খারাপ হয়, দুঃখ জাগে, কান্না পায়, ওরাও কথা বলে!
গভীরভাবে সবাই যদি মানবিক দৃষ্টিতে ভাবত, তবে আমার মতো করে সব মানুষের হৃদয়ের আয়নাতে ধরা দিত পালিয়ে আসা সিংহের দুঃখটুকু! হয়তো সে প্রতিনিয়ত চেষ্টা, অধ্যবসায়, সাধনা করে করে খাঁচা থেকে বের হতে পেরেছিল! যেতে চেয়েছিল সেই জীবনে যে জীবন তার প্রাপ্য! যেখানে তার সঙ্গী, বন্ধু ও স্বাধীনতা থাকবে, থাকবে স্বেচ্ছায় খাবার সংগ্রহের তাড়না, জুটি বাঁধার মৌসুম, বংশবৃদ্ধির আকাঙ্ক্ষা!
চিড়িয়াখানায় তেমন কোনো কিছুই নেই। একজন অপরাধী কয়েদিকে যেভাবে জেলখানায় অতিবাহিত করতে হয় অন্ধকার জীবন, তেমন করেই অপরাধ ছাড়াই যেন সিংহটি শাস্তি ভোগ করছে বন্দিত্বের!
সিংহটিকে এবং বাংলাদেশের যেকোনো চিড়িয়াখানায় রাখা প্রাণীদের মুক্তি দেওয়ার পক্ষে আমি। যেসব বন্য প্রাণীর জাত ধ্বংসের মুখে, সেই প্রাণীকুল বাঁচানো এবং সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য গবেষণা ও সংরক্ষণ এর প্রচেষ্টাটা ভিন্ন। তবে চিড়িয়াখানা নামের টর্চার সেল মোটেও ভালো কিছু না!
বাংলাদেশ থেকে নিষিদ্ধ করা হোক চিড়িয়াখানা, যাতে আমাদের দেখে আগামীর বিশ্ব প্রাণীর প্রতি সহানুভূতি, ভালোবাসা এবং প্রাণীর প্রাণ ও স্বাধীনতার সম্মান দিতে শেখে, মর্ম বুঝতে পারে!
তবেই পৃথিবী হয়ে উঠবে মানবিক, প্রাণীরা প্রাণীদের জগৎ ও জীবন ফিরে পেয়ে ভারসাম্য সমৃদ্ধ হতে শুরু করবে প্রকৃতি ও পরিবেশের। এটি মানবজীবন ও জগতের জন্য খুবই গুরত্বপূর্ণ।