শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা বা ইমিউন সিস্টেম বাহ্যিক জীবাণু, ভাইরাস ও ক্ষতিকর উপাদান থেকে আমাদের রক্ষা করে। তবে অনেক সময় এই প্রতিরোধব্যবস্থা অতিসংবেদনশীল হয়ে কিছু নির্দোষ বস্তুকেও ক্ষতিকর মনে করে প্রতিক্রিয়া দেখায়। এই অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়াকেই আমরা বলি অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন; আর যে নির্দোষ বস্তুটি শরীর ক্ষতিকর মনে করছে, সেটিকে বলে অ্যালার্জেন।
যেমন কোনো খাবার, ধুলোবালু, ফুলের পরাগ বা পশুর লোম—যা অন্যদের জন্য সাধারণ, তা কারও শরীরে অ্যালার্জেন হিসেবে কাজ করতে পারে। তখনই শুরু হয় অ্যালার্জির উপসর্গ।
এলার্জির প্রভাব: শরীরের তিনটি প্রধান সিস্টেম
অ্যালার্জি শরীরের প্রধানত তিনটি সিস্টেমকে প্রভাবিত করে—
১. ত্বক (স্কিন): আমাদের শরীরের সবচেয়ে বড় অঙ্গ। অ্যালার্জি হলে ত্বকে র্যাশ, চুলকানি, লালচে দাগ, চাকা চাকা ফোলা দেখা যায়। এসব ফোলা অংশ ঘুরে ঘুরে শরীরের বিভিন্ন অংশে দেখা দিতে পারে হাত, পা, পিঠ বা মুখে। কখনো কখনো জিহ্বা, ঠোঁট, চোখ বা আঙুলও ফুলে যেতে পারে।
২. শ্বাসতন্ত্র (রেসপিরেটরি সিস্টেম): এর ওপরের অংশে প্রভাব ফেললে নাক দিয়ে পানি পড়া, হাঁচি, কপালে ব্যথা—এসব উপসর্গ দেখা যায়, যাকে বলে অ্যালার্জিক রাইনাইটিস বা সাইনোসাইটিস। নিচের অংশে সমস্যা হলে শ্বাসকষ্ট, ঘন ঘন কাশি, যা পরবর্তী সময়ে অ্যাজমায় রূপ নিতে পারে।
৩. হজমতন্ত্র (ডাইজেস্টিভ সিস্টেম): অনেক সময় খাবারজনিত অ্যালার্জিতে পেটে ব্যথা, বমি, ডায়রিয়া, এমনকি ত্বকে র্যাশও দেখা যায়। এটি মারাত্মক ও জীবননাশকারীও হতে পারে।
সঠিক নির্ণয়ই প্রতিরোধের প্রথম ধাপ
অ্যালার্জির ধরন নির্ধারণ ও উপযুক্ত চিকিৎসার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা করা হয়—
• আইজিই (IgE) টেস্ট: শরীরে অ্যালার্জেন প্রবেশ করলে আইজিই নামের অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, যা হিস্টামিন রিলিজে সাহায্য করে। আইজিইর মাত্রা বেড়ে গেলে অ্যালার্জি নিশ্চিত হওয়া যায়।
• কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট (CBC): এর মাধ্যমে ইওসিনোফিল কাউন্ট নির্ধারণ করে অ্যালার্জির উপস্থিতি বোঝা যায়।
ভিটামিন ডি, ম্যাগনেসিয়াম ও জিঙ্ক
অ্যালার্জি রোগীদের মধ্যে প্রায়ই ভিটামিন ডির ঘাটতি দেখা যায়। এই ঘাটতি দূর করলে উপসর্গ অনেকাংশে কমে আসে।
অ্যালার্জি প্যানেল টেস্ট: অ্যালার্জি নিয়ন্ত্রণের স্মার্ট উপায়
সর্বাধিক কার্যকর একটি পরীক্ষা হচ্ছে অ্যালার্জি প্যানেল টেস্ট। এর মাধ্যমে জানা যায়—
• কোন খাবার, ধুলোবালু বা প্রাণিজাত বস্তু থেকে আপনার অ্যালার্জি হচ্ছে
• আইজিই মাত্রা কতটুকু
• উপসর্গের তীব্রতা কতখানি
এই তথ্য জানার মাধ্যমে আপনি সহজেই অ্যালার্জেন থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারবেন এবং অ্যালার্জি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে।
অন্যান্য টেস্ট
• আরএএসটি টেস্ট (RadioAllergoSorbent Test)
• এসপি টেস্ট (Skin Prick Test)
এই টেস্টগুলোও অ্যালার্জির উৎস নির্ধারণে সহায়ক।
অ্যালার্জি কখনো শুধু চুলকানি বা হাঁচির বিষয় নয়—এটি হজমতন্ত্র, শ্বাসতন্ত্র, এমনকি জীবনহানিকর পরিস্থিতি পর্যন্ত তৈরি করতে পারে। তাই উপসর্গ দেখা দিলে অবহেলা না করে সঠিক পরীক্ষা ও চিকিৎসার মাধ্যমে অ্যালার্জিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সতর্ক থাকুন, সুস্থ থাকুন।
লেখক: ওয়েলনেস অ্যান্ড বিউটি কনটেস্ট কনসালট্যান্ট এবং বন্ধুসভা জাতীয় পর্ষদের স্বাস্থ্য ও ক্রীড়া সম্পাদক।