অগ্নিবীণার অসমাপ্ত শেষ পাতা

চট্টগ্রাম কলেজের বাংলা বিভাগের অগ্নিবীণা ব্যাচ ১০৯ছবি: লেখকের সৌজন্যে
ভাবতেই অবাক লাগে, চোখের পলকে কখন যে এই সাহিত্যের প্যাঁচে পেঁচিয়ে ঘোরের মধ্য দিয়ে স্নাতকের পালা সাঙ্গ হয়ে গেল।

‎কলেজের চিরচেনা আঙিনা থেকে প্রস্থানের সময় কখন চলে এল, বুঝতেও পারলাম না। মনে হচ্ছে, এই তো সেদিন এ আঙিনায় সবার সঙ্গে বন্ধুত্বের সেতু বাঁধলাম। কেউ ‘মেঘনাদ’ পড়ে, কেউ ‘চর্যা’ পড়ে বলে উঠতাম, ‘বড্ড প্যারা’।

ভাবতেই অবাক লাগে, চোখের পলকে কখন যে এই সাহিত্যের প্যাঁচে পেঁচিয়ে ঘোরের মধ্য দিয়ে স্নাতকের পালা সাঙ্গ হয়ে গেল।

মনে পড়ে গানপাগল বন্ধুটার কথা। এই তো সেদিন গিটার কাঁধে ক্লাসে ঢুকছে। ভরা বর্ষায় ক্লাসরুমে ঝালমুড়ি আর চাপের আড্ডা, প্র্যাকটিস রুমে গিয়ে হারমোনিয়াম বাজিয়ে গানের আসর, শিশিরভেজা স্নিগ্ধ সকালের মতো গল্প, হাসি–আনন্দ আর শ্রাবণের মতো মেঘলা আকাশে বৃষ্টিমাখা অভিমানের দিন, সবই ছিল আমাদের। আমরা সযত্নে একটা গল্পগ্রন্থ তৈরি করলাম। যার শেষ পাতায় সমাপ্তি টানতেও ছিল আমাদের কত আয়োজন। এই আয়োজনে শামিল ছিল আমাদের শিক্ষকেরা, ছোট ভাইবোনেরা সবাই। ছোট ভাইয়ের অভিমানে চাপা বিষাদ সুরে কবিতা আবৃত্তি। কখনো গান না গাওয়া স্যারও আমাদের জন্য গান গাইলেন।

বন্ধু রায়হানের লেখা ও তাঁর কণ্ঠে গাওয়া, ‘মনে রেখো আমাদের ব্যাচটা, অগ্নিবীণার শেষটা।’ এই গানের সুরে সবার মধ্যে দেখা দিল বিষাদের নীরব কান্না। অন্তরের অলিন্দে ধ্বনিত হলো দীর্ঘশ্বাস। বাতাসে তখন অন্য আবেশ, অচেনা দোল। চেনা মুখগুলোয় ঘোর মেঘের ছায়া, চেনা কণ্ঠগুলো কেমন চাপা শোনাল। হঠাৎ বাইরে ঝুম বৃষ্টিতে মনে হলো ধুয়ে যাচ্ছে কোনো চিত্রকল্প, যা বহু যত্নে আঁকা হয়েছিল।

‎এই স্থানের, এই মানুষগুলো জীবনের সুন্দর একটা অধ্যায়। যাদের সঙ্গে অনুভবের, মায়ার বাঁধনে বাঁধা পড়ে গেলাম। সময়ের হাত ধরে চলে যাব হয়তো অন্য শহরে, কিন্তু রেখে যাব সবটা এখানে। একটা দিন যেমন গোধূলির রক্তিম আকাশের রেখায় বিদায় নেয়, তেমনি আমরাও ‘অগ্নিবীণা এক শূন্য নয়’ অধ্যায়ের অসমাপ্ত ইতি টেনেছি নিঃশব্দে ও অনুভবের চিহ্ন ফেলে।

আজ যখন পেছন ফিরে তাকাই, দেখি স্মৃতিগুলো একেকটি রঙিন কাচের টুকরা হয়ে একসঙ্গে গেঁথে হৃদয়ে তৈরি হয়েছে এক অপূর্ব মোজাইক। যেখানে আছে হাসি, আনন্দ, অভিমান, ভালোবাসা, বন্ধুত্ব আর ভুলে না থাকার প্রতিশ্রুতি।

অগ্নিবীণা ব্যাচ ১০৯
শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ, চট্টগ্রাম কলেজ