সারা রাত দুই চোখের পাতা এক করতে পারিনি। ভোর হলেই যে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে অনাবিল আনন্দের এক উৎসব! সারা দিন অনেক নতুন বন্ধুর সঙ্গে পরিচয় হবে, তাঁদের সঙ্গে গল্প-আড্ডা হবে—এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে সকাল হয়ে গেছে, টেরই পাইনি।
৩০ ডিসেম্বর, ভোর চারটায় শীতের তীব্রতা উপেক্ষা করে উষ্ণ কম্বলের ভেতর থেকে বের হয়ে যাই। অন্য দিন হলে এই সময় আমাকে কেউ জোর করেও বিছানা থেকে নামাতে পারত না। কিন্তু এদিন নিজ থেকেই উঠে গেলাম। বন্ধুত্বের ডাকে যে সাড়া দিতেই হবে।
কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে আছে রাজধানী শহর। এর মধ্যেই সকাল ছয়টায় বাসা থেকে বের হই আমরা দুই বন্ধু। প্রাথমিক গন্তব্য সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই সেখানে পৌঁছে যাই। ধীরে ধীরে দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসতে থাকেন বন্ধুরা। সকাল নয়টায় সাত শতাধিক বন্ধুকে নিয়ে তীব্র কুয়াশার বুক চিরে চাঁদপুরের উদ্দেশে সদরঘাট ছেড়ে যায় আমাদের বহনকারী ‘এমভি নিউ সাব্বির ৩’ নামের লঞ্চটি।
নাশতা পর্বের পরই শুরু হয়ে যায় আনন্দ আড্ডা। বন্ধুদের পরিবেশিত নাচ-গানে নিজেকে সঁপে দিয়ে মুহূর্তেই ভুলে যাই তীব্র শীতের প্রকোপ। মেঘনার বুক চিরে দীর্ঘ প্রায় ছয় ঘণ্টার ভ্রমণ শেষে বিকেল চারটার দিকে লঞ্চটি চাঁদপুর তিন নদীর মোহনায় পৌঁছায়। সেখানে আমাদের সাদরে বরণ করে নেয় চাঁদপুর বন্ধুসভা। মেঘনা নদীর পারে ইলিশের শহরে ইলিশ ভাজার স্বাদ মুখে লেগে আছে এখনো। খাবার পর্ব শেষে নদীর অপার সৌন্দর্যে নিজেকে ক্যামেরাবন্দী করতে ভুলেননি কেউ। আমিও বাদ যাইনি।
সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থান করার পর আবারও আমাদের যাত্রা শুরু হয় ঢাকার উদ্দেশে। পথিমধ্যে নাচ-গানসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে সবাইকে মাতিয়ে রাখেন বন্ধুরা। সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল র্যাফল ড্রয়ের ফল ঘোষণা। আমাদের ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি বন্ধুসভা থেকে তিনজন পুরস্কার পান।
বন্ধুত্বের তালিকায় যুক্ত হয় নতুন নতুন বন্ধু, জ্ঞানের পরিধিতে যুক্ত হয় নতুন কিছু অভিজ্ঞতা। নদী আমার সব সময়ই প্রিয়। নদীর প্রতি এই প্রেম বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন বন্ধুসভার বন্ধুরা। বড্ড বেশি উত্তেজিত ছিলাম আয়োজনটি নিয়ে। যতটা আশা করেছি তার থেকেও অনেক বেশি পেয়েছি।
ঘড়ির কাঁটায় রাত তখন ১০টা। ঢাকায় পৌঁছে যাই। সবাই ফিরতে ব্যস্ত নিজ নীড়ে, সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন এক ঝুড়ি আনন্দের স্মৃতি। পুরো যাত্রাটা আমার কাছে ছিল রোমাঞ্চকর এক অনুভূতি। জীবনের প্রথম লঞ্চযাত্রা, সঙ্গে সাত শতাধিক বন্ধুত্বের ছোঁয়া। সদরঘাটে ফিরতেই মনটা বিষাদে ছেয়ে গেল। কবি মন আমার কেঁদে কয়, ‘ফিরতে ঘরে ভয়, আবার কবে মিলব বন্ধুত্বের আনন্দ ধারায়। হায়, মন আমার পরে রয় সেই জলধারায়।’
বন্ধু, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি বন্ধুসভা