একটি প্রাণ, এক প্রজন্মের অনুপ্রেরণা
আবু সাঈদ। একটি নাম, একটি অনুপ্রেরণা, একটি হৃদয়বিদারক ইতিহাস। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সেই তরুণ যোদ্ধা, যাঁর নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগ আজও আমাদের বিবেককে কাঁপিয়ে তোলে। তাঁর কথা মনে পড়লেই বুকের ভেতরটা হাহাকার করে ওঠে, কেমন যেন দুমড়ে-মুচড়ে যায় প্রাণটা। কী অসম্ভব দুঃখ, কী অতল সাহস—যা দিয়ে সে গোটা জাতির জন্য নিজের জীবন বিসর্জন দিয়েছিল।
রংপুর যাওয়ার পথে বারবার মনে হচ্ছিল, যদি একবার তাঁর সেই শহীদ হওয়ার স্থানটি দেখতে পারতাম! হৃদয়ের আকুল ডাকে সেদিন ছুটে যাই তাঁর স্মৃতির সন্ধানে। সেই জায়গায় পৌঁছে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি। আবু সাঈদের নিঃশব্দ উপস্থিতি, সেই সাহসের মাটি—সবকিছু আমাকে নীরব করে দিয়েছিল। কুর্নিশ হয়ে তাঁর স্পর্শের এক মুঠো মাটি তুলে নিলাম। যেন সেই সাহসটুকু গায়ে মেখে আমি বেঁচে থাকি, চলি, বলি।
আমি তাঁর নাম লেখা গেটটির সামনে দাঁড়িয়ে শুধু তাকিয়ে রইলাম। ‘আবু সাঈদ গেট’ নামটা চোখে জল এনে দিল, মনের ভেতর একটা তীব্র আর্তনাদ উঠল। চোখ বেয়ে অশ্রুধারা গড়িয়ে পড়ছিল, আর হৃদয়ে চলছিল এক নীরব প্রতিজ্ঞা—এই আত্মত্যাগ বৃথা যাবে না।
আবু সাঈদ আমাদের চোখে শহীদ, কিন্তু তার চেয়েও বেশি কিছু—সে আমাদের বিবেক। সে আমাদের সাহসের প্রতীক, অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়ানোর প্রেরণা। আমাদের প্রজন্মের সেই সাহসী কণ্ঠ, যে জীবন দিয়ে জানিয়ে গেছে—দেশের জন্য ভালোবাসা মানে কেবল মুখের বুলি নয়, প্রয়োজনে প্রাণ ত্যাগের অঙ্গীকার।
তাঁকে হারিয়ে আমরা হারিয়েছি এক সম্ভাবনা, কিন্তু পেয়েছি এক অমর দীপ্তি। তাঁর জীবন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আমাদের চলতে হবে—সত্য, ন্যায় আর স্বাধীনতার পথে। শহীদের রক্ত বৃথা যেতে পারে না। আমাদের কাজ, আমাদের প্রতিদিনের সংগ্রামই হোক সেই রক্তের প্রতিদান।
হাজার সালাম আবু সাঈদ, কোটি কোটি সালাম তোমাকে। তুমি বেঁচে থাকবে আমাদের হৃদয়ে, আমাদের লড়াইয়ে, আমাদের স্বপ্নে।
সভাপতি, ঢাকা মহানগর বন্ধুসভা