যদি প্রতিদিন একটি গাছ লাগাতাম
ঢাকার বাতাসে এখন ঘন ধুলা আর ধোঁয়ার মিশ্রণ। কখনো কখনো মনে হয়, আমরা আকাশ নয়, ধোঁয়ার নিচে বেঁচে আছি। প্রতিদিনের জীবনে এতটা অভ্যস্ত হয়ে গেছি যে কেউ আর খেয়ালই করে না এই বাতাসই আমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু হয়ে উঠছে। রিপোর্ট বলছে, ঢাকার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স এখন প্রায়ই ১৭০ থেকে ৩০০-এর মধ্যে ঘোরাফেরা করে, যা বিপজ্জনক মাত্রা।
আমরা উন্নয়নের নামে দিনরাত নতুন ভবন তুলছি, রাস্তা চওড়া করছি; কিন্তু ভুলে যাচ্ছি, এই উন্নয়ন যদি প্রকৃতির শ্বাস বন্ধ করে দেয়, তাহলে সেটি আর উন্নয়ন নয়, ধ্বংসের আরেক নাম। পান্থকুঞ্জ পার্ক তারই এক স্পষ্ট উদাহরণ। একসময় এই পার্ক ছিল সবুজে ঢাকা, শহরের মানুষ একটু শান্তি পেত সেখানে গিয়ে। কিন্তু উন্নয়নের নামে সেই গাছের সারি কেটে কংক্রিট বসানো হয়েছে। বাতাসে নেই সেই পুরোনো সতেজ গন্ধ। এটা শুধু একটি পার্কের ক্ষতি নয়, বরং শহরের ফুসফুসে একরাশ ধুলা ঢুকিয়ে দেওয়ার মতো কাজ।
আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, আমরা এই পরিবর্তনগুলোর নেতিবাচক প্রভাব বুঝেও চুপ থাকি। কেউ ভাবে, আমার একার কিছু করার নেই। কিন্তু আসলে এখান থেকেই শুরু হয় বিপর্যয়। যখন গাছ কাটা হয়, তার প্রভাব কেবল পরিবেশে নয়, আমাদের শরীর, মানসিক শান্তি, এমনকি সমাজের আচরণেও পড়ে। আমরা অস্থির হয়ে উঠি, গরমে রাগ বাড়ে, ক্লান্তি আমাদের স্থায়ী সঙ্গী হয়ে যায়। এই চক্রটা চলতেই থাকে, কেউ থামায় না।
যদি আমরা এখনই সিদ্ধান্ত নিই, প্রতিটি পরিবার বছরে অন্তত পাঁচটি গাছ লাগাবে, তাহলে ২০৩০ সালের মধ্যেই বাংলাদেশে প্রায় ৩০ কোটির বেশি গাছ জন্ম নিতে পারে। এটা শুধু সংখ্যা নয়, ভবিষ্যতের বাঁচার শর্ত। একটা গাছ মানে ছায়া, অক্সিজেন, বৃষ্টি, পাখির আশ্রয়—সব মিলিয়ে জীবন। বাতাস পরিষ্কার হলে আকাশও পরিষ্কার হবে। এর সঙ্গে আমরা ঢাকার আকাশ থেকে নানা মহাজাগতিক দৃশ্যগুলো খালি চোখেই যেমন দেখতে পারব, তেমনি আমাদের ভবিষ্যতের প্রজন্মকে একটি স্বাস্থ্যকর বাতাস উপহার দিতে পারব। আমরা যদি প্রতিদিন একটি করে গাছ লাগাই, তাহলে হয়তো একদিন আবার ঢাকার আকাশটা নীল হবে। হয়তো কোনো এক সকালে, পান্থকুঞ্জের মতো জায়গায় হাঁটতে গিয়ে কেউ বলবে, আবার সবুজ ফিরে এসেছে, বাতাস পরিষ্কার হয়েছে।
সবকিছু শুরু হোক আজ থেকেই—একটা ছোট চারা, একটুখানি যত্ন, আর একটু বিশ্বাস নিয়ে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কংক্রিট নয়, একটি শ্বাস নেওয়ার পৃথিবী উপহার দেওয়া আমাদেরই দায়িত্ব।
সভাপতি, ক্যামব্রিয়ান বন্ধুসভা