জ্ঞানের আলোকবর্তিকা ও জাতির ভবিষ্যৎ নির্মাতা

শিক্ষার প্রাথমিক ভিত্তি গড়ে ওঠে পরিবারে, কিন্তু এর পূর্ণতা আসে শিক্ষকের হাতেছবি: এআই/বন্ধুসভা

‘আজ হতে চিরউন্নত হল শিক্ষাগুরুর শির,
সত্যই তুমি মহান উদার বাদশাহ আলমগীর।’
—কাজী কাদের নেওয়াজ।

কবি কাদের নেওয়াজের ‘শিক্ষাগুরুর মর্যাদা’ কবিতার এই অমর পঙ্‌ক্তিগুলো শিক্ষকতার চিরন্তন তাৎপর্যকে স্মরণ করিয়ে দেয়। কারণ, শিক্ষকই জাতির আলোকবর্তিকাধারী এবং মানবজাতির ভবিষ্যৎ নির্মাতা। প্রকৃতপক্ষে, শিক্ষকতা এমন এক মহৎ পেশা, যা অন্য সব পেশার জন্ম দেয়। এ কারণেই হেনরি এডামস বলেছেন, ‘একজন শিক্ষক চিরকাল প্রভাব বিস্তার করেন; কেউ বলতে পারেন না তাঁর প্রভাব কোথায় গিয়ে শেষ হয়।’

শিক্ষার প্রাথমিক ভিত্তি গড়ে ওঠে পরিবারে, কিন্তু এর পূর্ণতা আসে শিক্ষকের হাতে। জাপানি একটি প্রবাদে বলা হয়, ‘হাজার দিনের অধ্যবসায়ের চেয়ে একজন শিক্ষকের নিকট একদিন অধ্যয়ন শ্রেয়।’ সত্যিই, একজন শিক্ষক শিক্ষার্থীর সুপ্ত প্রতিভাকে জাগ্রত করেন, তাঁকে যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলেন। চাণক্য পণ্ডিত তাই যথার্থই বলেছেন—
‘গুরু যদি একবর্ণ শিষ্যরে শিখায় কোনো দিন,
পৃথিবীতে নাই দ্রব্য যা দিয়ে শোধ দিবে ঋণ।’

আমরা জানি, যে জাতি যত শিক্ষিত, সে জাতি তত উন্নত। শিক্ষিত জাতি গঠনের প্রধান চালিকাশক্তি শিক্ষক। সত্য ও সুন্দরের পথে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা একজন আদর্শ শিক্ষকের সাধন ও দর্শনের মাধ্যমেই সম্ভব। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র তথা গোটা জাতি তার দ্বারা উপকৃত হয়। এ জন্য শিক্ষকদের প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা জ্ঞান অর্জন করো এবং জ্ঞান অর্জনের জন্য আদব-শিষ্টাচার শিখো। আর যাঁদের কাছ থেকে জ্ঞান গ্রহণ করো, তাঁদের সম্মান করো।’ (আল-মুজামুল আওসাত, হাদিস নং: ৬১৮৪)

যদিও সময়ের বিবর্তনে অল্প কিছু শিক্ষক তাঁদের পেশার মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করেছেন, শিক্ষার্থীদের প্রতি অবিচার কিংবা অনৈতিক আচরণ করেছেন, তবু তাদের সংখ্যা নগণ্য। এ কারণে পুরো শিক্ষক সমাজকে প্রশ্নবিদ্ধ করা, অপমান করা বা অবমূল্যায়ন করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, যুগে যুগে শিক্ষকরাই জাতির কান্ডারি। শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। আর এই মেরুদণ্ডকে দৃঢ় রাখেন কেবল শিক্ষকেরা।

সর্বোপরি, শিক্ষক বাঁচলে শিক্ষা বাঁচবে; শিক্ষা বাঁচলে দেশ বাঁচবে। তাই পৃথিবীর সব শিক্ষক ভালো থাকুক, নিজের আলোয় আলোকিত করুক জগৎসংসার।

দুর্যোগ ও ত্রাণ সম্পাদক, মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি বন্ধুসভা